অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর বিনিয়োগের জন্য জ্বালানি খুব প্রয়োজন। আমরা এখন বিদ্যুত্ উত্পাদনের সক্ষমতা বাড়িয়েছি। গ্যাসেও সুখবর রয়েছে। নতুন গ্যাস আবিষ্কারে কাজ চলছে। তাছাড়া এখন আমরা শুধু নিজেদের গ্যাসের ওপর নির্ভর করছি না। গ্যাস আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। তাই আগামী দুই বছরের মধ্যে আর জ্বালানির সমস্যা থাকবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই) আয়োজিত ‘শিল্প বিনিয়োগে সম্ভাবনা ও ঝুঁকি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিসিআইয়ের সভাপতি একে আজাদের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মেয়র আনিসুল হক।

 

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা যেন জমির সমস্যায় না পড়েন সেজন্য শিল্প পার্ক করা হচ্ছে। শিল্প পার্কে বিদ্যুত্ ও ইটিপি সরকারই দায়িত্ব নিয়ে করে দিবে। বিদ্যুত্ উত্পাদনের সাম্প্রতিক চিত্র তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিদ্যুত্ উত্পাদনের সক্ষমতা এখন প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। সামনে তা আরও বাড়বে। কিন্তু এ বিদ্যুত্ সঞ্চালনের জন্য যে ট্রান্সমিশন লাইন দরকার তা অনুপযুক্ত। এখানে বিনিয়োগ করা দরকার। জ্বালানি তেলের দাম প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও আমরা দেশে তা পরিবর্তনের চিন্তা করিনি। তবে আমরা বুঝতে পারছি যে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম স্থিতিশীল থাকতে পারে। এরকম পরিস্থিতি বজায় থাকলে তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করা যায় কিনা তা বিবেচনা করা হবে। তবে তেলের দাম আমরা বার বার পরিবর্তন করতে চাই না।

 

ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যার কথা বহুদিন ধরেই উদ্যোক্তারা বলছেন। আমরা তা সমাধানে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা করেছি। আশা করছি, বছর দুয়েকের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা সমাধান হবে। এজন্য এলএনজি (তরলীকৃত গ্যাস) আমদানির প্রচেষ্টা চলছে। কাতার থেকে এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। এলএনজির পাইপ লাইন ও টার্মিনালের কাজও চলছে। সব মিলিয়ে আগামী দুই বছরের মধ্যে উদ্যোক্তারা গ্যাস পাবেন। এর উপর ভিত্তি করে উদ্যোক্তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ড. তৌফিক আরও বলেন, উদ্যোক্তারা নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ চান। এটাও আমরা ব্যবস্থা করব। এ ব্যাপারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।

 

আনিসুল হক বলেন, দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেক্ষেত্রে অবকাঠামো, জ্বালানি ও জমির সমস্যাই বেশি। কয়েকটি সেক্টরকে গুরুত্ব দিয়ে এ সমস্যা সমাধানে কাজ করা দরকার। এ সময় তিনি জ্বালানির নিশ্চয়তায় একটি নীতিমালা দাবি করেন। তিনি বলেন, কখন থেকে, কোন্ জায়গায় এবং কীভাবে বিদ্যুত্ পাওয়া যাবে সে বিষয়ে পথনির্দেশ থাকলে উদ্যোক্তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে।

 

মতবিনিময় সভায় পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে হলে অবকাঠামোগত সমস্যা দূর করতে হবে। এজন্য চাই বিদ্যুত্। শুধু বিদ্যুত্ দিলেই হবে না, বিদ্যুত্ হতে হবে মানসম্পন্ন, নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন। তিনি আরও বলেন, দেশে সুদের হার আরও কমানো সম্ভব। এজন্য মূল্যস্ফীতির হার আরও কমিয়ে আনতে হবে।

 

সভাপতির বক্তব্যে একে আজাদ বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। এর কারণ হলো অবকাঠামো সমস্যা। তবে সামনে বিপদ অপেক্ষা করছে। আমরা এখন একক খাত পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। অন্য খাতগুলোর প্রবৃদ্ধি ভালো নয়। তাছাড়া মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে। অথচ ব্যাংকে টাকা জমে আছে। এর কারণ হলো উদ্যোক্তারা ভবিষ্যত্ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। তাদের অনিশ্চয়তার বিষয় হলো জ্বালানি।

 

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি লতিফুর রহমান, বিটিএমএর সভাপতি তপন চৌধুরী, ঢাকা চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হুমায়ুন রশিদ, বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি নাসির, বিপিজিএমইএর সভাপতি জসিম উদ্দিন, বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক, বিকেএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি মো. হাতেম, রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন, আমেরিকান চেম্বারের সভাপতি নুরুল ইসলাম, নোয়াব প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান, বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রমুখ।

 

বক্তারা বলেন, জ্বালানি সাশ্রয়ী হোম এপ্লায়েন্স ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। গ্যাসের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে অপচয় ও অবৈধ লাইন বন্ধে কঠোর হতে হবে। গাড়িতে সিএনজি দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে। মিডিয়ার স্বার্থে নিউজপ্রিন্টের ওপর আরোপিত শুল্ক কমাতে হবে।