সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দলের কাজে আরো বেশি করে সময় দেয়ার জন্যই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দপ্তরবিহীন করা হয়েছে।’

আজ দুপুরে ঢাকা বাবুবাজার ব্রিজের দুই প্রান্তে সড়ক ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন করতে গিয়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হয়তো তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মনে করেছেন দলের কাজে তাকে আরো বেশি সময় দেয়া প্রয়োজন। সেটা করতেই তিনি তাকে (সৈয়দ আশরাফ) সেই সুযোগ করে দিয়েছেন।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে সৈয়দ আশরাফকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করার প্রজ্ঞাপন জারির পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা অবাক হয়ে যান। তখন থেকে কেউ এ ব্যাপারে মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলেন।

কিন্তু আজ শুক্রবার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী আশরাফের ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন। এর একজন হলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আরেকজন হলেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় সিলেটের কাজীরবাজার ব্রিজ পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে, বিষয়টি আগে থেকেই আমরা ৬-৭ জন জানতাম। কিন্তু আর কাউকে অব্যাহতি দেয়া হবে কি না তা বলা মুশকিল।’

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একজন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে যখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয় তখনই একটি প্রস্তাব দিয়ে রাখা হয়েছিল যে, তিনি মন্ত্রী থাকবেন। কিন্তু তার কোনো দপ্তর থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী এতোদিন পর সেই প্রস্তাব কার্যকর করলেন।’

আর ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রত্যেক দেশেই সরকার প্রধান থাকেন, আমাদের দেশেও আছেন। তিনি প্রয়োজন মনে করলে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্ত করেন। আবার প্রয়োজন মনে না করলে সরিয়েও নেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করায় দলে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলেও মন্তব্য করেন এ মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ভালো-খারাপ এ কয় বছর দেশ পরিচালনায় আপনারা দেখেছেন। তার (প্রধানমন্ত্রী) কোনো সিদ্ধান্ত বেঠিক হয়নি।’

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রিজের ওপর বাস দাঁড় করিয়ে স্ট্যান্ড বানানো যাবে না। আমাদের সমন্বয় সভায় এ বিষয়টি সিদ্ধান্ত ছিল- ব্রিজগুলো সব সময় পরিস্কার থাকবে, যাতে ব্রিজে কোনো ধরনের যানজটের সৃষ্টি না হয়।’

তিনি বলেন, ‘সেতুর এ যানজট নিরসন করার দায়িত্ব পুলিশের। আমি ব্রিজ পরিদর্শনে এলেও পুলিশ আসেনি।’

পরে মন্ত্রী স্পটে দাঁড়িয়ে পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার ও ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, সৈয়দ আশরাফকে যখন দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয় তখন ওবায়দুল কাদের এ পদের একজন শক্ত দাবিদার ছিলেন।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম টানা ছয় বছর ধরে দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী থাকলেও তার বিরোধী একটি শক্তিশালী গ্রুপ ঐক্যবদ্ধ ছিল। সূত্র মতে, ওই গ্রুপে রয়েছেন- সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানকসহ আরো কয়েকজন।

এক সময় মোহাম্মদ নাসিম দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার ইচ্ছা ছিল তারও। আর নাকক বর্তমানে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মঙ্গলবার থেকে চলা গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। ওইদিন দুপুরে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬ এর রুল ৩ (৪)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালায়ের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলমাকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।

মন্ত্রণালয় এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বৈঠকে অনুপস্থিতি নিয়ে আশরাফের সমালোচনা ছিল দলে। গত মঙ্গলবারও তিনি একনেকের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের প্রথম এজেন্ডাই ছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। এলাকার বাঁধ, রাস্তাঘাট, কালভার্ট নির্মাণের জন্য ২৮৪ জন সংসদ সদস্যকে প্রত্যেককে ২০ কোটি টাকা দেয়ার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী বৈঠক শুরু করতে তার জন্য অপেক্ষা করেন। ২৫ মিনিট পার হয়ে যায়। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তিনি (সৈয়দ আশরাফ) মিটিং-টিটিংয়ে আসেন না। তাকে সরিয়ে দিলেই ভালো হয়।’

এরপরই মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা তৎপর হয়ে ওঠেন। কেবিনেট ডিভিশনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তিনি নির্দেশ দেন এ সংক্রান্ত সার সংক্ষেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে।