ভারতের উদ্যোগে মহাকাশে উেক্ষপণের অপেক্ষায় থাকা ‘দক্ষিণ এশীয় স্যাটেলাইট’-এর সঙ্গে যুক্ত হলো বাংলাদেশ। এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুই দেশ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির শিরোনাম ‘অ্যাগ্রিমেন্ট বিটুইন দ্য গভর্নমেন্টস অব রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ কনসার্নিং টু অরবিট ফ্রিকোয়েন্সি কো-অর্ডিনেশন অব সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট প্রপোজড অ্যাট ফোর্টি এইট ডিগ্রি ইস্ট’।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সম্মেলন কক্ষে চুক্তিটি সই হয়। বাংলাদেশের পক্ষে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং ভারতের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা এতে স্বাক্ষর করেন। এর আগে গত সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টির অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান অনুষ্ঠানে বলেন, সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইটের ১২টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে একটি বিনা মূল্যে পাচ্ছে বাংলাদেশ এবং তা যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করা যাবে।
এ বছরই স্যাটেলাইটটি উেক্ষপণ করা হবে এবং এর সব খরচ বহন করছে ভারত সরকার।
হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, এ স্যাটেলাইট উেক্ষপণে ৪০ কোটি ডলার খরচ হবে। এটি প্রায় প্রস্তুত এবং খুব শিগগির উেক্ষপণ করা হবে। সার্কভুক্ত যে দেশগুলো এর সঙ্গে যুক্ত হবে, তাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এ যুগান্তকারী চুক্তির মধ্য দিয়ে আমরা সার্ক অঞ্চল স্যাটেলাইটের মতো হাইটেক সহযোগিতায় যুক্ত হলাম। শুধু বাংলাদেশ নয়, এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশও যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলে বার্তা যাবে যে আমরা কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। ’
বিদেশে অবস্থানরত ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম একটি অডিও বার্তায় চুক্তি স্বাক্ষরকারীদের অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রসচিব শহিদুল হক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার, বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ডিসেম্বরে মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উেক্ষপণের কথা রয়েছে। এর আগেই ভারতের এ স্যাটেলাইট সেবা শুরু হচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ অনুসারে স্যাটেলাইটটি চলতি মাসের শেষ দিকে উেক্ষপণ হওয়ার কথা। সার্ক অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আপত্কালীন জরুরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমে ‘সার্ক স্যাটেলাইট’, পরে নাম বদলে ‘দক্ষিণ এশীয় স্যাটেলাইট’ উেক্ষপণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ স্যাটেলাইট উেক্ষপণের প্রস্তাব রাখেন। কিন্তু এ প্রস্তাবে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালদ্বীপ ও নেপাল রাজি হলেও পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বেঁকে বসে। এ জন্য এর নাম পরিবর্তন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দক্ষিণ এশীয় স্যাটেলাইট বিষয়ে সমঝোতা স্মারক/চুক্তির বিষয়ে মতামত দিতে প্রস্তাবটি ২০১৫ সালের ২১ মে বিটিআরসির সভায় উত্থাপন করা হয়। সেখানে বিটিআরসি জানায়, এতে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১-এর ফ্রিকোয়েন্সি ও সেবার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না তা দুই দেশের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে কারিগরি পর্যালোচনার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি মতামত দেয় যে বঙ্গবন্ধু-১-এর তরঙ্গ ও সেবায় প্রভাব না ফেললে দক্ষিণ এশীয় স্যাটেলাইট সমর্থন করা যায়। তবে উভয় স্যাটেলাইটের কাভারেজ বিবেচনায় ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কার বিষয়টি জানিয়ে বিটিআরসি গত বছরের ৭ এপ্রিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে চিঠি দেয়। এরপর গত বছরের ১০ আগস্ট ভারত সরকারের আমন্ত্রণে বিটিআরসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা আইএসআরওর সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে বৈঠক করে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে গত বছরের ১০ অক্টোবর এ বিষয়ে অরবিট ফ্রিকোয়েন্সি কো-অর্ডিনেশন চুক্তির খসড়ায় এই ধারা সংযুক্ত করা হয় যে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সিতে দক্ষিণ এশীয় স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। এরপর গত বছরের ১৩ অক্টোবর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বিটিআরসিকে দক্ষিণ এশীয় স্যাটেলাইট বিষয়ে প্রস্তাবিত ফ্রিকোয়েন্সি কো-অর্ডিনেশন চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করতে বলে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ উেক্ষপণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেসের সঙ্গে বিটিআরসির এ বিষয়ে চুক্তি সই হয়। ফ্রান্সের থুলুজে স্যাটেলাইটটির মূল কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা।