মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের পরিবারকে চার কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ক্ষতিপূরণ চেয়ে তাঁর স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদের করা মামলার রায়ে বাসের চালক, বাস মালিক ও বীমা কম্পানিকে তিন মাসের মধ্যে ওই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল রবিবার এই মামলায় চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন। বাংলাদেশে এই প্রথম হাইকোর্ট সরাসরি শুনানি করে কোনো ক্ষতিপূরণের মামলায় রায় দিলেন। রায়ে বাদীপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করলেও বিবাদীপক্ষ আপিল করবে বলে জানিয়েছে। একই দুর্ঘটনায় নিহত সাংবাদিক মিশুক মুনীরের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা মামলার শুনানি আগামী বছর ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
রায়ে বলা হয়েছে, রায়ের কপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে বিবাদীদের ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে বাসের (চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স) তিন মালিক দেবেন চার কোটি ৩০ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫২ টাকা, বাসচালক জমির উদ্দিন দেবেন ৩০ লাখ টাকা এবং ইনস্যুরেন্স কম্পানি দেবে ৮০ হাজার টাকা। তিন মালিক সমান হারে টাকা দেবেন। এ টাকা নিহতের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, নিহতের ছেলে নিষাদ মাসুদ ও বৃদ্ধা মা নুরুন নাহার পাবেন। রায় ঘোষণার সময় ক্যাথরিন মাসুদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে ক্যাথরিন মাসুদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও অ্যাডভোকেট রমজান আলী। চুয়াডাঙ্গা বাস মালিকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুস সুবহান তরফদার এবং রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স কম্পানির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার ইহসান এ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ও অ্যাডভোকেট আবু রায়হান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইসরাত জাহান সান্ত্বনা।
মামলায় তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ প্রথমে সাত কোটি ৭৬ লাখ ২৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। পরে ক্ষতিপূরণের দাবির পরিমাণ বাড়িয়ে ৯ কোটি ৯৪ লাখ ৩০ হাজার ৯৮ টাকা করা হয়। পরে মামলা দুটি জনস্বার্থে হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ এবং মিশুক মুনীরের স্ত্রী কানিজ এফ কাজী ও ছেলে সুহৃদ মুনীর ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর পৃথক দুটি আবেদন করেন। হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর এ আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর মামলা দুটি মানিকগঞ্জ আদালত থেকে হাইকোর্টে বদলি করা হয়। এর মধ্যে ক্যাথরিন মাসুদের করা মামলায় ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ হাইকোর্টে প্রথম শুনানি হয়। পরে বিভিন্ন দিনে এ মামলায় শুনানি হয়। গত ১৬ নভেম্বর শুনানি শেষে ২৯ নভেম্বর রায়ের দিন নির্ধারণ করা হয়। এরপর নির্ধারিত দিনেই আদালত রায় ঘোষণা শুরু করেন।