জামায়াতের বাঘা বাঘা নেতারা যখন পরাস্ত ঠিক তখনই জামায়াতে ইসলামীর মাঠ পর্যায়ের রাজনীতির হাল ধরছেন ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতারা। দলটির চলতি সঙ্কট সময়ে শিবিরের সাবেক নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা এখন দলের নীতি নির্ধারক হিসেবে কাজ করছেন। শীর্ষ নেতারা এখন শুধু কাগজ-কলমেই পদপদবী ধরে আছেন। যদিও ছাত্রশিবিরের নতুন প্রজšে§র নেতাদের কেন্দ্রে আনার ক্ষেত্রে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে প্রবল আপত্তি ছিল।
একাত্তরে মানবতবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১০ সালে যখন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা একের পর এক গ্রেপ্তার ও কারাবরণ করেন। তখনই দলটির নেতৃত্বশূন্যতা দেখা দেয়। ফলে দলের মধ্যে নীতি নির্ধারণ নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। আর তখনই শীর্ষ পদে মেধাবীদের বসানো গুরুত্ব অনুভব করে নেতারা। ফলে কয়েক দফায় ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতাদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও কর্ম পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারাই এখন জামায়াতে ইসলামীর হাল ধরেছেন। তবে কৌশলগত কারণে এখনো দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে পদ থেকে সরানো হয়নি। এরা এখন কারাগারে। শিবিরের সাবেক নেতা, দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধকালীন যাদের ভূমিকা বিতর্কিত ছিল না তাদের হাতেই দল পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেয়া হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ও মহানগর নেতাদেরও কেন্দ্রে আনা হচ্ছে।
জামায়াতে পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে শিবিরের সাবেক নেতারা বর্তমানে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য হয়েছেন। তারা হলেন- অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, অধ্যাপক তাসলিম আলম, মুহাম্মদ ইজ্জতউল্লাহ, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, নুরুল ইসলাম বুলবুল, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, মাওলানা আব্দুল হালিম, মাওলানা রফিউদ্দিন আহমেদ ও মাওলানা এটিএম মাছুম। এরা সবাই ইসলামি ছাত্র শিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
ওই সূত্র জানায়, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদই নয়, দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ৫৫ সদস্যের কর্মপরিষদের মধ্যে অধিকাংশই আশির দশকে এবং তার পরবর্তী সময়ে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। দলের কর্মপরিষদে সর্বশেষ আনা হয়েছে ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ অনেক শীর্ষ নেতাকেই। তাদের মধ্যে রয়েছেন- শিবিরের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ সেলিম উদ্দিন, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও মঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া, মোবারক হোসেন, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, মাওলানা শামসুল ইসলাম (চট্টগ্রাম মহানগর আমির), সাইফুল আলম খান মিলন, মুহাম্মদ শাহজাহান। একই সঙ্গে রাজশাহী মহানগরী আমির অধ্যাপক আতাউর রহমান, খুলনা মহানগরী আমির আবুল কালাম আযাদ, বরিশাল মহানগরী আমির এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, রংপুর মহানগরী আমির অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বেলাল। সর্বশেষ শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. রেজাউল করিম, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এসএম আলাউদ্দিন, অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিনকে যুক্ত করা হয়েছে। এরা সবাই ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা।
দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সদস্য জানান, ইতোমধ্যে জেলা, উপজেলা থেকে শুরু করে সব বিভাগীয় শহর, ঢাকা মহানগর কমিটিতেও শিবিরের সাবেক নেতাদের আনা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, যাদেরকে আনা হয়েছে তাদের বয়স ৩৫ থেকে ৫০ বছর। ঢাকা মহানগরের অধিকাংশ থানা কমিটিগুলোর নেতৃত্বে আনা হয়েছে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতাদের। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধের কোনো অভিযোগ নেই এবং সাবেক ছাত্রশিবিরের মেধাবীদের নেতৃত্বে আনা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য ও দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘কারাগারে আটক দলের শীর্ষ নেতাদের স্বপদে বহাল রেখেই দলকে পুনর্গঠন করা হচ্ছে। ২০১০ সালের পরবর্তীতে কয়েক দফায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, কর্মপরিষদসহ বিভিন্ন কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটিতে ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’