পঞ্চগড়ের গারতি ছিটমহলের বাসিন্দা মো. নুর হোসেন। কিন্তু তার রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র! ৬০ বছর বয়সী নুর হোসেন একজন কৃষক। তিন ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। একজন ছিটমহলবাসী হিসেবে তার জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার কথা নয়। আরো অবাক হওয়ার বিষয়: নুর হোসেনের মতো অধিকাংশ ছিটবাসীর রয়েছে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র।

ভারতীয় ছিটমহলবাসী হয়েও কীভাবে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র পেলেন নুর হোসেন, জানতে চাইলে তিনি  জানালেন, ভোটার আইডি কার্ড না থাকায় সব সময়ই নানা রকম ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন বড় দুই ছেলেকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সময়।

নুর হোসেন বলেন, ছেলেদের বিদেশ পাঠাবেন সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু বিদেশে যেতে পাসপোর্ট করতে হয়। যখন পাসপোর্ট করতে গেলেন তখন জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হলো। জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া পাসপোর্ট করা যায় না। আর তাই পার্শ্ববর্তী হাফিজাবাদ ইউনিয়নের এক পরিচিত ব্যক্তির ঠিকানা ব্যবহার করে তিনি ও তার পরিবারের সবাই জাতীয় পরিচয়পত্র করে নেন।

নুর হোসেনের মতোই বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় ছিটমহলের অধিকাংশ বাসিন্দা বাংলাদেশের কোনো একটি গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করে নিয়েছেন জাতীয় পরিচয়পত্র।

পঞ্চগড়, লালমনিরহাট ও কুঁড়িগ্রামের বেশ কয়েকটি ছিটমহলে ঘুরেও দেখা গেছে, ছিটমহলে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষেরই জাতীয় পরিচয়পত্র আছে।

একই ছিটমহলের আরেক বাসিন্দা মোকলেচ উদ্দিন বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করার জন্য আর ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালানোর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র করি। আরো অনেক কাজেই লাগে ভোটার আইডি কার্ড লাগে। কিন্তু এখন বাংলাদেশ হলে আমি আমার ঠিকানাতেই আমার ভোটার আইডি কার্ড করতে চাই।’

এ ব্যাপারে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি মো. মফিজার রহমান বলেন, ‘আমাদের ছিটমহলগুলোর প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ বাসিন্দাই নানাভাবে লুকোচুরি করে ভোটার আইডি কার্ড করেছে। তবে এখন এই অন্যায় আমরা স্বীকার করি। আর আমাদের নিজেদের ঠিকানায় ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হতে চাই।’

তবে বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখতে চান পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন অমানবিক জীবনযাপন করেছেন ছিটের বাসিন্দারা। আমরা চাইলেও আমাদের কিছু করার ছিল না। যেহেতু ছিটমহল থেকে ভোটার হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। সে কারণে অনেকেই বাংলাদেশের ঠিকানা ব্যবহার করে ভোটার হয়েছেন। তবে এটি সংশোধন করার সুযোগ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুত তাদের ভোটার আইডি কার্ড করার ব্যবস্থা করবো। এজন্য নির্বাচন কমিশন থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হলেও তা নেয়া হবে বলে।’

এদিকে, গতকাল সোমবার থেকেই যৌথ প্রতিনিধি দলের জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে ছিটমহল বিনিময় কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। এর আগে দুই দেশের ছিটমহলবাসীকে তাদের পছন্দমতো নাগরিকত্ব বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে।

কিন্তু সরেজমিন দেখে মনে হচ্ছে, এই নাগরিকত্ব নির্ধারণ এবং জমি মালিকানা নির্ধারণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি জটিলতা দেখা দেবে। কারণ ভারতীয় ছিটমহলের বেশিরভাগ মানুষই বাংলাদেশ ছাড়তে চান না। তারা এদেশেরই নাগরিক হতে চান। আর এই চার দশকে জমি বেচাকেনা হয়েছে সাদা কাগজে অথবা অন্য দেশের কোনো স্ট্যাম্পের ওপর সই করে। একই ভাবে এক জমি বিক্রি হয়েছে কয়েকবার! এসব জমির মালিক এখন কে হবে?