সরকারের তিন মন্ত্রী পলিব্যাগে আমদানিসহ কয়েকটি তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেওয়ায় ব্যবসায়ীরাও চালের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা নিজেরা হৈচৈ করেন, বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন মন্ত্রীদের সঙ্গেও। তবে শেষ পর্যন্ত দাম কমানোর ঘোষণার মধ্য দিয়ে বৈঠকটি সফলভাবেই শেষ হয়। ধারাবাহিক অভিযান চালানোর মধ্যে এ বৈঠকে চালকল মালিক সমিতির নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে তাঁদের আসতে বলা হয়। বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সোয়া দুই ঘণ্টা আলোচনার পর চাল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আপনাদের সব বাধা দূর করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে সঙ্গে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ’ চাল আমদানি, উৎপাদন ও সরবরাহে আগামী তিন মাস চটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যে যেভাবে আনতে পারেন আনবেন। কেউ বাধা দেবে না। এ ছাড়া ভারত থেকে ট্রেনে করে রোহনপুর দিয়ে চাল আনার পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম কোনো সংকট নেই এবং সারা দেশে প্রায় এক কোটি টন চাল আছে—এ মন্তব্য করে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিমভাবে দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে উল্টো নানা নীতির সমস্যা ও সরকারের বিরুদ্ধে সময়মতো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার অভিযোগ আনেন।
ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি বিভিন্ন অসুবিধার কথা তুলে ধরেন। ভারত থেকে চাল আমদানিকারক চিত্ত মজুমদার বলেন, আমদানি শুল্ক তুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরও সাত দিন লেগেছে এসংক্রান্ত গেজেট জারি করতে। এই সাত দিনে বিভিন্ন স্থলবন্দরে হাজার হাজার ট্রাক আটকে ছিল। ওই সময় যদি তাত্ক্ষণিকভাবে গেজেট জারি করা হতো, তাহলে প্রতি কেজিতে সাত টাকা করে চালের দাম কমে যেত।
চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বৈঠকে জানান, পলিব্যাগ ব্যবহার করতে দিলে কাল থেকে চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা করে কমে যাবে।
চালকল মালিক আমিনুল কবীর বলেন, বিশ্বের আর কোনো দেশে চটের বস্তায় চালের ব্যবসা হয় না। ভারত, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম—সব দেশই পলিথিনের বস্তায় চাল রপ্তানি করে। কেবল বাংলাদেশে রপ্তানি করতে গেলেই তাদের চটের বস্তা খুঁজতে হয়। ব্যবসায়ীরা বহুবার চটের বস্তার এ বাধ্যবাধকতা চাল আমদানির ক্ষেত্রে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি।
এক পর্যায়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে জিটুজি করার জন্য বহু চেষ্টা করেছি। তারা প্রতি টন চালের দাম ৫১৬ ডলার চেয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে আমাদের পক্ষে ভারত থেকে আমদানি সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের দেশে এক কোটি টন চালের মজুদ রয়েছে। ’ এই পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করেন। তাঁরা বলতে থাকেন, দেশে এক কোটি টন চাল মজুদ নেই।
সভার শেষ পর্যায়ে এসে খাদ্যমন্ত্রী ঘোষণা দেন আগামীকাল (আজ বুধবার) থেকে উপজেলা পর্যায়ে খোলাবাজারে চাল বিক্রি শুরু হবে। ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা আপাতত হচ্ছে না বলে তিনি জানান।