চাকরি জীবনে কোনো কর্মকর্তা একবার শাস্তি পেলে তিনি আর পদোন্নতি পাবেন না। বিশেষ বিবেচনায় শুধু উপসচিব পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। এসএসবি’র (সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড) এমন সিদ্ধান্তের কারণে এবার তিন স্তরে একযোগে পদোন্নতি দেয়ার সময় অন্তত আড়াইশ’ কর্মকর্তা পদোন্নতি পাওয়া থেকে ছিটকে পড়েছেন। এছাড়া বেঞ্চ মার্ক (প্রয়োজনীয় পাস নম্বর) না থাকা, গুরুতর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা চলমানসহ অন্য আরও কিছু কারণে পদোন্নতি পাননি কয়েকশ’ কর্মকর্তা। এর ফলে উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার জন্য প্রায় দু’হাজার কর্মকর্তার নাম বিবেচনায় নেয়া হলেও শেষমেশ পদোন্নতির দেখা পেয়েছেন ৮৭৩ জন। বাদ পড়েছেন প্রায় ১১শ’। আশার কথা, বঞ্চিত তালিকা থেকে ১৭৪ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু তারপরও এমন কিছু কর্মকর্তা পদোন্নতি থেকে বাদ পড়েছেন যাদের বাদ পড়ার মতো দৃশ্যমান কোনো কারণ জানা যায়নি। এসব কর্মকর্তার মধ্যে অনেকে মেধাবী হিসেবে পরিচিতি।
বিশেষ করে ‘নেক্সট বিলো রুল’ অমান্য করে ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা না দিয়ে জুনিয়রকে পদোন্নতি দেয়ায় ক্ষোভ অসন্তোষের শেষ নেই। এ কারণে যারা অতিরিক্ত সচিব হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের কেউ কেউ এ পদোন্নতিকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করবেন বলেও ইঙ্গিত দেন। সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যারা উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের কষ্টের শেষ নেই। অনেকে কোনো কারণ জানতে না পেলে ক্ষোভ-হতাশায় ভুগছেন। ইচ্ছে করলেও আগের মতো অফিসের কাজে মন বসাতে পারছেন না।
বড় সংকট : পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের পোস্টিং দেয়া নিয়ে এখন সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হবে। কেননা, শূন্যপদ না থাকায় বেশিরভাগ কর্মকর্তাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ইনসিটো (পূর্বের পদে) করা হবে। অর্থাৎ পদোন্নতি পেলেও আগের চেয়ারে বসে কাজ করতে হবে। আবার এই সুযোগ সচিবালয়ের বাইরে দফতর সংস্থার প্রেষণ পদের জন্য সহজ হলেও সচিবালয়ের ডিউটি পদে ততটা সহজ হবে না। এ রকম পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২০০৬ সালে উপসচিব পদে প্রথমে ২৮০ জন কর্মকর্তাকে সুপারনিউমারি পোস্টিং দেয়া হয়। পরবর্তীতে বছর বছর নবায়ন করে ওই সংখ্যাও বাড়ানো হয়। ফলে পদোন্নতি পেলেও বহু উপসচিবকে পূর্বের সিনিয়র সচিবের চেয়ারে বসে কাজ করতে হয়। এরপর যুগ্মসচিবদের কপালেও একই দুর্ভোগ নেমে আসে। এমনও দেখা গেছে, আগে মন্ত্রণালয়গুলোর যেসব কক্ষে সিনিয়র সহকারী সচিব অফিস করতেন এখন সেখানে কাজ করেন যুগ্মসচিব। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফাইলে নোট দেয়ার পর যুগ্মসচিব স্বাক্ষর করেন। এরপর ফাইল চলে যায় সরাসরি সচিবের কাছে। সর্বশেষ সোমবার প্রায় ৯শ’ কর্মকর্তাকে উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ায় এ সংকটের এখন কূল-কিনারা থাকবে না। ওএসডি না হলে পূর্বের চেয়ারে বসে বেশিরভাগ কর্মকর্তাকে কাজ করতে হবে। অনেকে মনে করেন, প্রশাসনে পদোন্নতির বিষয়টি মর্যাদা ও ক্ষমতায়নের বিষয় হলেও এখন অনেক ক্ষেত্রে এর কোনোটিই ভোগ করা যায় না। তবু সবার প্রত্যাশা ঘুরপাক খায় এই পদোন্নতিকে ঘিরে। কেননা, এর সঙ্গে আর্থিক বিষয় ছাড়াও নানামুখী সুবিধা যুক্ত হওয়ার সূত্র জড়িত।