তিন সিটি নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তাদের কর্মীরা মামলার সন্ধানে নেমেছেন। নিজেদের অজান্তে কোনো মামলা থানায় পড়ে আছে কিনা তা খুঁজে বের করার জন্য দেশের বিভিন্ন থানায় প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন। বিশেষ করে ২০ দলীয় জোট সমর্থক প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের বেশিরভাগই কোনো না কোনো মামলার আসামি। এসব মামলায় অনেকে জামিনে আছেন আবার কেউ আছেন পলাতক। অনেকে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার সঠিক সংখ্যাও জানেন না। এ জন্য আইনজীবীর চেম্বার আর থানায় ধরনা দিচ্ছেন পলাতক প্রার্থীদের আত্মীয়-স্বজনরা। প্রার্থীরা গোপন মামলার আতংকে দিন পার করছেন। এদের সবাই জামিন নেয়ার জন্য আজকালের মধ্যেই আদালতের দিকে ছুটবেন। এতে আগামী কয়েকদিন সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের জামিনের বিষয় নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে পারেন আদালত। কে জামিন পেলেন আর কোন প্রার্থী জামিন পেলেন না জানতে তিন সিটিসহ দেশবাসীর চোখ থাকবে আদালতের দিকে।
এদিকে আপিল বিভাগ আগাম জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্টকে সাত দফা গাইড লাইন অনুসরণের জন্য নির্দেশ দেন। এরপর থেকে হাইকোর্টে আগাম জামিনের পথ সংকুচিত হয়েছে। চারটি বেঞ্চের আগাম জামিন শুনানির এখতিয়ার থাকলেও একটি বেঞ্চ এ ধরনের আবেদন গ্রহণ করছেন।
ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থক মেয়র প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি হলফনামায় ১৩টি মামলার কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে তিনি পাঁচটিতে জামিনে আছেন। বাকিগুলো ‘পেন্ডিং’ রয়েছে বলে তিনি কমিশনকে জানিয়েছেন। এসব মামলায় জামিন নিতে হবে। এছাড়া দুটি মামলায় অব্যাহতি এবং একটির কার্যক্রম হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত আছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আরও রাজনৈতিক মামলা আছে কিনা তা নিশ্চিতভাবে জানেন না তিনি নিজে বা তার আইনজীবীরা। ৫ জানুয়ারির পর থেকে টানা অবরোধ-হরতালের সময় সহিংসতায় যে মামলাগুলো দায়ের হয়েছে তার মধ্যে আবদুল আউয়াল মিন্টুর নাম আছে কিনা তার অনুসন্ধান চলছে। কারণ, বিএনপি জোটের চলমান আন্দোলনের সময় পুলিশের পক্ষ থেকে করা মামলায় ২০-২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা বা এফআইআরের ভেতরে কোথাও নাম ঢুকিয়ে দেয়া হতে পারে। এজন্য ঢাকা, কুমিল্লা ও ফেনীর অনেক থানায় দায়ের হওয়া মামলার এফআইআর যাচাই-বাছাই করে দেখছেন তার আইনজীবীরা। এসব মামলায় তার নাম আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন তার প্রতিনিধিরা। এরপরই তারা আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলে জানা গেছে।
মেয়র প্রার্থীদের মতো কাউন্সিলর প্রার্থীরা ছুটছেন মামলার সন্ধানে। তাদের নামে গোপনে কোথাও মামলা হয়েছে কিনা অথবা অজ্ঞাত আসামির মধ্যে তার নাম ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিনিধিদের ব্যস্ত রাখছেন। মামলার কারণে তিনি নিজে প্রকাশ্যে এসব খোঁজখবর করতে পারছেন না। ফলে আত্মীয়স্বজন বা আইনজীবীর মাধ্যমে মামলার সন্ধান চালাচ্ছেন। একই সঙ্গে অনেক প্রার্থী আছেন তারা জানেন তাদের নামে কতগুলো মামলা আছে। এর মধ্যে ক’টিতে জামিন নেই। সেগুলোর জামিনের জন্য আদালতে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টদের। এ ধরনের সব প্রার্থীই জামিন আবেদনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ তাদের প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। দলের সমর্থন পাওয়ার পরই তারা আদালতে যাবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগাম জামিনের আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী জুবায়ের ইজাজের। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। এভাবে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের চেম্বার থেকে প্রায় অর্ধশত কাউন্সিলর প্রার্থীর জামিন আবেদন ইতিমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ঢাকার দক্ষিণের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী হামিদুল হক। তার বিরুদ্ধে মোট ১৮টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে ৯টিতে জামিনে আছেন। আর বাকি ৯টিতে জামিন আবেদন দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তিনি যুগান্তরকে জানিয়েছেন।
প্রার্থীদের আগাম জামিনের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘আমি মনে করি এ মুহূর্তে আগাম জামিন নেয়ার প্রশ্ন আসে না। অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে। মামলাতো আর একটা না। কতগুলো মামলায় আগাম জামিন নেয়া যাবে?
তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার মামলা হয়েছে, হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে আছে, এক লাখ-দেড় লাখ কর্মী পালিয়ে আছে, এ মুহূর্তে সরকার আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে গ্রেফতার শুরু করে, হয়রানি করে তাহলে তার ফল যা হওয়ার তাই হবে।’ তিনি বলেন, সরকার ইতিবাচক অবস্থানে আসবে এ আশায় বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসুক, সেই চিন্তা নিয়ে বিএনপি এগুচ্ছে। তবে হয়রানি শুরু করলে তার পরিণতি যা হওয়ার তাই হবে। নির্বাচনে গেছি বলে যে ফিরে আসা যাবে না, তা তো নয়।’