বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথমবারের মতো দুদিনের সফরকালে আগামীকাল রবিবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে আধাঘন্টার বৈঠক করবেন। সোনারগাঁও হোটেল স্যুটে বিকাল বিকেল ৪টার পর এ বৈঠকের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই বৈঠকে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছাড়াও দলের ১০ জনের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেবেন। গত বৃহস্পতিবার রাতেই ভারতীয় হাইকমিশন থেকে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে নরেন্দ্র মোদির বৈঠক বিষয়ে বিএনপিকে অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হবে কিনা এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে নানা ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছিল। বিএনপির তরফ থেকে বারবার মোদি-খালেদা বৈঠক হবে বলা হচ্ছিল। তবে গত শুক্রবার সকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী খালেদা জিয়ার সাথে মোদির বৈঠকের ‘সুযোগ নেই’ বল দাবি করেন। কিন্তু তারপরই দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর মোদি-খালেদা বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে না পড়লেও নরেন্দ্র মোদি বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করবেন।
অন্যদিকে মোদির বাংলাদেশ সফরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ার পর বৈঠকের আগ্রহ জানিয়ে দিল্লিতে চিঠি দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। এতে বিজেপির সাথে বিএনপির অতীতের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে ভবিষ্যতে সে সম্পর্ক আরো গভীর হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। মূলত ভারতের জনতা পার্টি-বিজেপি নেতারা এবং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ একটি অরাজনৈতিক সংস্থাাু বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করার বিষয়ে নরেন্দ্র মোদিকে পরামর্শ দিয়েছেন। ওই সংস্থার মতে- বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার দল বিএনপি বিপুল মানুষের কাছে জনপ্রিয়। বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক না হলে ‘নেতিবাচক’ মনোভাব সৃষ্টি আশঙ্কা থাকে।
মূলত নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে একটি পজিটিভ মেসেজ দিতে চান, যাতে বাংলাদেশের মানুষ ভারত সম্পর্কে পজিটিভ ধারণা পায়। জনগণের সাথে জনগণের সম্পর্ক স্থাপন এবং সব দলের সাথে সুসম্পর্কের ওপর গুরুত্ব দিতে চান তিনি। মোদি এদেশের জনগণের ‘অ্যান্টি ইন্ডিয়ান’ মনোভাবের পরিবর্তন করতে উদ্যোগী হয়েছেন। তার সফরে এ বিষয়টির ছাপ স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হবে।
নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠকে বিএনপির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে। বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন, বাণিজ্য ঘাটতি, সীমান্তে হত্যাসহ দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আলোচনার পাশাপাশি বিএনপির তরফ থেকে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হবে। এ ক্ষেত্রে বৃহৎ গণতান্ত্রিক প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সহযোগিতা চাইবে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এনাম আহমেদ চৌধুরী, বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ড.এমাজউদ্দীন আহমদ উপস্থিত থাকবেন। তবে প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যে কিছু পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।
নরেন্দ্র মোদির সাথে খালেদা জিয়ার আসন্ন বৈঠকে যেসব বিষয়ে বিএনপি গুরুত্ব দেবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দু’দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি সীমান্ত সমস্যার সমাধান, তিস্তা চুক্তি, করিডোরের নামে ট্রানজিট, জঙ্গিবাদ, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতের সহযোগিতা, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ফেরত পেতে ভারত সরকারের সহযোগিতা চাইবেন। পাশাপাশি সাল্হা উদ্দিনকে কী কারণে কারা ভারতে নিয়ে গেছে এসব বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। বিএনপি যে ভারত বিরোধী না এই বিষয়টি পরিস্কার ভাবে জানাবে বিএনপি। এছাড়া খালেদা জিয়াকে নিজ বাড়ি ও কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখাসহ নানা বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত ও ভিডিও চিত্র বিজেপি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে তুলে দেওয়া হবে বলে দলের সূত্র জানায়।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, দুই নেতার মধ্যে দু’দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ বিষয় নিয়ে কথা হবে। দেশ গণতন্ত্রবিহীন অবস্থায় চলছে এ বিষয় নিয়ে সেখানে কথা হবে। তিস্তা নদীর পানির হিস্যা, ট্রানজিট, জঙ্গিবাদসহ নানা বিষয়ে কথা হবে। আবার তাদের কিছু চাওয়া পাওয়ার বিষয় আছে সে বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।
ভারতের পরাষ্ট্র সচিবের সংবাদ সম্মেলনে মোদি-খালেদা বৈঠকের বিষয়টি প্রকাশের পর বিএনপি শিবিরে এক ধরণের স্বস্তি বিরাজ করছে। এর আগ পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন ছিলো খালেদা জিয়ার সঙ্গে মোদির সাক্ষাত হচ্ছে কিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ইতিবাচক হিসেবেই নিচ্ছে বিএনপি।