দেশবাসীকে নতুন বাংলা বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কারো হস্তক্ষেপ জনগণ মেনে নেবে না।
শুক্রবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ’বাংলাদেশের অবস্থা দেখে অনেকে এগিয়ে আসতে চায় অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার জন্য এবং উন্নয়নের নামে অভ্যন্তরে ঢুকে দেশকে দুর্বল করার জন্য।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যখন ৮ কোটি লোক ছিল, নিজেরা ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল। আজকে ১৬/১৭ কোটি লোক ঐক্যবদ্ধ হলে তাদের কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই- আমরা সকলকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই। কিন্তু কেউ যদি আমাদের বন্ধু হয়ে প্রভু হতে চায়, সেটা আমরা কখনো মেনে নেব না। কারো প্রভুত্ব বাংলাদেশের মানুষ স্বীকার করবে না।’
নতুন বছরে সবার জন্য শুভ কামনা করে তিনি বলেন, ‘নববর্ষ যেন দেশের মানুষের মনের সত্যিকারের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে। আমরা কী চাই? আমরা চাই- গণতন্ত্র, উন্নয়ন, শান্তি আর জনগনের কল্যাণ।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘গণতন্ত্র ও জনগণের কল্যাণের জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বিএনপি সবসময় জনগণের কল্যাণ ও জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাস করে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশ থেকে সন্ত্রাস,গুম-খুন ও জঙ্গিবাদ বিদায় করব। বিদায় করব নানা রকম ষড়যন্ত্র। এসব বিদায় করে দেশে শান্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করব।’
এসময় বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশের মানুষ কষ্টে আছে। কয়েকদিন আগে বৃষ্টি ও বাইর থেকে পানি এসে আমাদের হাওর অঞ্চলের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গরীব কৃষকদের পাশে গিয়ে আমাদের দাঁড়াতে হবে। তাদের সাহায্য করতে হবে তারা যেন এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারে।
তিনি বলেন, ‘পানি সমস্যা আমাদের একটা বড় সমস্যা। সামনে শুকনো মৌসুম আসছে, এই মৌসুমে আমাদের পানির প্রয়োজন। সেজন্য আমরা বলতে চাই- আমাদের পানির যে ন্যায্য হিস্যা তা আমরা চাই। আমরা কারো কাছে দয়া চাচ্ছি না, আমরা আমাদের অধিকারটুকু চাই।’
প্রধানমন্ত্রীর সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরের প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমান স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী বেড়িয়ে এসেছেন, কিন্তু নিজের দেশের মানুষের স্বার্থের কথা, অধিকারের কথা বলতে পারেননি।’
তিনি বলেন, ‘এতোগুলো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক হয়েছে। তিনি (শেখ হাসিনা) যদি সাহস করে শুধু একটা কথা বলতে পারতেন- তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দেন। তাহলে আমি সমঝোতা করব, না হয় করব না। এটা বললে আমরা সবাই তার পাশে থেকে সাহস ও সমর্থন জানাতাম।’
নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস’র আয়োজনে বাংলা নববর্ষ-১৪২৪ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
দুপুর থেকে নয়াপল্টনের সড়কে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান সমাবেশে রূপ নেয়। বিকাল সাড়ে ৪টায় সুতির শাড়ি পরিহিতা খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের অভিবাদনের গ্রহণ করেন।
বর্ণাঢ্য আয়োজনে তবলা, হারমোনিয়াম, ডুগডুগি, বাঁশিসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের মূর্চনায় শুরু হয় পহেলা বৈশাখের জাসাসের এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে জাসাস শিল্পীরা ভাটিয়ালী, দেশাত্মবোধক ও বাউল গান পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও বক্তব্য রাখেন।
জাসাস সভাপতি অধ্যাপক মামুন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক হেলাল খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আবদুল মঈন খান, বিএনপি নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আতাউর রহমান ঢালী, খায়রুল কবীর খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নুরী আরা সাফা, আজিজুল বারী হেলাল, আমিনুল হক, হেলেন জেরিন খান, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, তাইফুল ইসলাম টিপু, নিপুন রায় চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাসাসের চিত্রনায়ক আশরাফউদ্দিন উজ্জ্বল, বাবুল আহমেদ, শায়রুল কবির খান, মনিরুজ্জামান মুনির, আহসান উল্লাহ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন ভুঁইয়া শিশির, সানাউল হক, সিবা সানু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।