সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে খালেদা জিয়ার প্রচারণা চালানো নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে সহস্র নাগরিক কমিটি। তাদের মতে, প্রচারণায় নেমে তিনি উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন। যা আচরণবিধির সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। এতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও নষ্ট হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সহস্র নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিরা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
কমিটির সদস্য সচিব গোলাম কুদ্দুস বলেন, খালেদা জিয়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। পহেলা বৈশাখে নয়াপল্টনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের নামে রাস্তা বন্ধ করে মেয়র প্রার্থীদের পরিচয় করে দিয়েছেন। এছাড়া তাদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন, যা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আবার বিশাল গাড়িবহর নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, সামগ্রিকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। এটিও আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, সিইসিকে বলেছি, আপনি সব সময় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কথা বলছেন। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসনের কারণে এটি নষ্ট হচ্ছে, সামগ্রিকভাবে উত্তেজনাকর অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
এজন্য আমরা বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানিয়েছি, বলেন তিনি।
কুদ্দুস বলেন, আমাদের দাবির পক্ষে সিইসি বলেছেন, আপনাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথভাবে যা করণীয় করা হবে।
সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, খালেদা জিয়া কখন কোথায় যাচ্ছেন সাংবাদিকরাও জানতে পারছেন না। কারণ, তিনি ঘোষণা দিয়ে কোথাও যাচ্ছেন না। কাজেই কারা আক্রমণ করছে, তারা জানেন কিভাবে? প্রশ্ন রাখেন তিনি। এছাড়া আক্রমণ হওয়ার চল্লিশ মিনিটের মধ্যে বিশেষ দল, বিশেষ ছাত্র সংগঠনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে। কাজেই উত্তেজনা ছড়ানোর এটাও একটা কৌশল হতে পারে।
তিনি বলেন, খালেদার এসব তৎপরতা নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার লঙ্ঘন। এছাড়া এটি নিদর্লীয় নির্বাচন। কাজেই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা মাঠে থাকবেন না, সেটিই প্রত্যাশা করি। এটি একটি নৈতিকতার দাবি। কেননা, একটি দলের শীর্ষ নেতারা নামতে পারছেন না। অন্য দলের নেতারা নামছেন। তাহলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা কোথায় থাকলো? তাই আমরা সিইসির কাছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে বলেছি।
বুলবুল আরও বলেন, আইনগতভাবে খালেদা জিয়া ভোটার ও নাগরিক। সরকারের সুবিধা ভোগ না করলে যেখানে ইচ্ছা যেতেই পারেন। কিন্তু নৈতিকভাবে তিনি একজন রাজনৈতিক দলের নেতা। কাজেই খালেদা জিয়া যেখানে যান, সেখানেই রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়ায়। তিনি চান বা না চান সেটা রাজনৈতিক কর্মসূচিতেই পরিণত হয়। তার গতিবিধিই রাজনৈতিক গতিবিধি। তাই কখনও কখনও এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হচ্ছে কি-না, সেটিও সন্দেহজনক।
এছাড়া তার প্রচারণায় নামার আগের সপ্তাহ ও পরের সপ্তাহের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট বৈসাদৃশ্য রয়েছে-যোগ করেন বুলবুল।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ দেশের ৪০ বছরের নির্বাচনী ইতিহাসে কখনও সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা ছিলো না। সব সময় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবেই দায়িত্ব পালন করেছে। তাই কোনো কোনো জোট, কোনো কোনো নেতা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছে। প্রথমে বলা হলো, সেনাবাহিনী মোতায়েন করার জন্য, পরে আবার সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা চাওয়া হলো। নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই এসব বলা হচ্ছে।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে সহস্র নাগরিক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন, এসকে হাবিবুল্লাহ, মৃণাল কান্তি দাস, অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবীর কাউসার, কবি রাসেল আশিকি উপস্থিত ছিলেন।