ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ‘ড্যাপ নিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছিল। তাই প্রস্তাবিত ড্যাপে মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ’ একই অনুষ্ঠানে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা থেকে বিভিন্ন বেসরকারি সিকিউরিটি সংস্থার ‘নো পার্কিং’ লেখা চিহ্নগুলো সরিয়ে নিতে বলেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। না হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
গতকাল শুক্রবার বুয়েট কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ‘ইউআরপি ডে ২০১৭’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন। বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ইউএসএবি দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মেয়র আনিসুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, “একটি সুন্দর নগর তৈরি করার স্বপ্ন নিয়ে মেয়র হয়েছি। অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে মেয়রকে কাজ করতে হচ্ছে। তিন মাস আগেও বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সামনের ফুটপাত দিয়ে কেউ চলতে পারত না। এখন সেসব ফুটপাত দিয়ে সাধারণ মানুষ মাথা উঁচু করে হাঁটতে পারছে। গরিব হকারদের ফুটপাত থেকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি অনেক ক্ষমতাবান কোটিপতিদের দখল থেকেও ফুটপাত মুক্ত করেছি। এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আর গুণগত মানের বিষয়ে আমরা ‘জিরো টলারেন্স’ নিয়ে কাজ করছি। ফলে কয়দিন পরেই গুলশান এভিনিউ বিশ্বের যেকোনো উন্নত দেশের এভিনিউয়ের সমপর্যায়ে উন্নীত হবে। ”
মেয়র আরো বলেন, ‘২০১৯ সালের জুনের মধ্যে ঢাকা উত্তরের প্রতিটি রাস্তা, ফুটপাত ও নর্দমা নির্মাণ ও সংস্কার, রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধন ও সবুজায়ন, এলইডি সড়কবাতি এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শেষ করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। একটি স্বপ্নের শহর বিনির্মাণের পরিকল্পনা দেওয়ার দায়িত্ব নগর পরিকল্পনাবিদদের। বাংলাদেশকে সুন্দর করতেও তাঁরাই সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারেন। ’
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান ড. আফসানা হকের সভাপতিত্বে উদ্বোধন পর্বে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ড. গোলাম রহমান বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ড. এ কে এম আবুল কালাম উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ‘নগর শৈলী’ নামে ইউএসএবির বার্ষিক প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রথম পর্যায় শেষে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনার শিক্ষার্থীরা পোস্টার প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হয় দ্বিতীয় অধিবেশন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপত ড. সারোয়ার জাহান, অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ, অধ্যাপক ড. রেজাউর রহমান ও বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রমুখ। এ অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম।
ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক তাঁর উপস্থাপনায় (১৯৯৫-২০১৫) ড্যাপের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন ড্যাপ (২০১৬-৩৫) নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক অসঙ্গতি পেয়েছি। নিউ মার্কেট এলাকার একটি ছোট বাণিজ্যিক স্থানকে আজিমপুর কবরস্থান হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর আজিমপুরের ইরাকি খেলার মাঠও কবরস্থানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া নিউ মার্কেটের বাণিজ্যিক ভবন ঢাকা কলেজের কমপ্লেক্সে দেখানো হয়েছে। এসব নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগের ড্যাপ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে এক ধরনের ভীতি ছিল। এসব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। ’
আশরাফুল ইসলাম প্রস্তাবিত নতুন ড্যাপ নিয়ে বলেন, ‘আমরা এবার সাধারণ মানুষকে ড্যাপে সম্পৃক্ত করতে যাচ্ছি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডগুলোতে আলোচনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখানে একজন নাগরিক তাঁর নানা অসুবিধার কথা তুলে ধরতে পারছেন। জনগণের সুবিধার কথা চিন্তা করে আমরা একটি বাস্তবধর্মী ড্যাপ তৈরির কাজ করছি। এরই মধ্যে ড্যাপ ও ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান নিয়ে গণশুনানি হয়েছে। ’