
রাজনৈতিকভাবে জার্মানি দীর্ঘদিন ধরেই স্থিতিশীল। ১২ বছর ধরে চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের নেতৃত্বে চলা দেশটির টানাপড়েনের কথা শোনাই যায় না।
তবে মত না মেলায় নতুন জোট সরকার গঠনের আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর সেই জার্মানি কঠিন রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। ইউরোপের এই শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তিটি আগাম নির্বাচন আয়োজনে বাধ্য হতে পারে। মার্কেল অবশ্য যেকোনোভাবে এই সংকট থেকে উত্তরণের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তিনি বিষয়টি কতটা গুছিয়ে আনতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে জার্মানি অন্তত কয়েক সপ্তাহ মোটামুটি অকার্যকর সরকার নিয়ে দিন পার করবে। স্বদেশ বা ইউরোপ কোনো পর্যায়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে না। সংকট হচ্ছে, সম্ভাব্য জোটের কোনো সম্ভাবনাও সামনে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয়। গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি মার্কেলের রক্ষণশীল সিডিইউ-সিএসইউ জোট। তবে মাসাধিককাল আলোচনার পরও ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনের কট্টরপন্থী দল এফডিপির সঙ্গে কোনো সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি তারা।
গত রবিবার রাতে আলোচনা ভেঙে দেন লিন্ডন। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বাজেভাবে সরকার পরিচালনা করার চেয়ে না করাই ভালো। ’ তিনি আরো বলেন, ‘জার্মানির আধুনিকায়নের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে অভিন্ন কোনো অবস্থান তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ’
এফডিপির সিদ্ধান্তে খেদ প্রকাশ করে মার্কেল বলেন, ‘চ্যান্সেলর হিসেবে দেশকে এই সংকটের সময় থেকে বের করে আনতে সব কিছু করব আমি। ’ সংবাদ সাময়িকী দের স্পিগেল মধ্যস্থতার আলোচনার এই ফলাফলকে মার্কেলের জন্য ‘বিপর্যয়কর’ অভিহিত করে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন থেকেই জার্মানি স্থিতিশীল অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যেই দেশটিকে ‘ব্রেক্সিটের সময়’ এবং ‘ট্রাম্পের কাল’ কাটাতে হচ্ছে।
মার্কেলের ঘনিষ্ঠ মিত্র ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংস্কার পরিকল্পনার বিষয়েও একই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগ্রহী তাঁরা দুজন। জার্মানির বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার বিষয়ে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করে ম্যাখোঁ বলেছেন, ‘পরিস্থিতিতে উত্তেজনা বাড়তে থাকার আমাদের স্বার্থের অনুকূলে নয়। ’ এর মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন মুদ্রা ইউরোর দরপতন শুরু হয়েছে।
জার্মানিতে মার্কেলের জনপ্রিয়তা পড়তে শুরু করে দুই বছর আগে তিনি ১০ লাখ অভিবাসী গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে। এর পরই পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো আসন পায় ইসলামবিরোধী অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)। ১২.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে পার্লামেন্টে তাদের আসন ৯৪টি এবং পার্লামেন্টে তারা তৃতীয় সংখ্যাগুরু দল। ৭০৯ আসনের পার্লামেন্টে মার্কেলের জোটের আসন ২৪৬টি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এটাই তাঁর দলের সবচেয়ে খারাপ ফল। তাঁর পূর্বতন জোটসঙ্গী এসপিডি পেয়েছে ২০.৫ শতাংশ ভোট। তাদের আসন ১৫৩টি। ভোটের পরই তারা ঘোষাণা দেয়, সরকার নয়, এবার বিরোধী দলের আসনে বসতে চায় তারা। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে হয়তো মার্কেল আবার তাদের দারস্থ হবেন। সংকট নিয়ে আলোচনায় গতকাল মার্কেলের প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক ওয়াল্টার স্টেইনমায়ারের সঙ্গে দেখা করেন।