ঢাকা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রী হয়রানি যেন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি টোল, অন্যদিকে গেট পার করেই উধাও হয়ে যাচ্ছে কুলি।
আর লঞ্চ পর্যন্ত গেলেও দাবি করছে বাড়তি টাকা। যাত্রী পারাবার টিকিট নিয়েও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। কাগজে-কলমে ইজারাদার না থাকলেও শ্রমিক ঠিক করে দিচ্ছেন নিউ ভিশন ইকোসিটির পরিচালক মো. শিপু আহমেদ।
বিআইডাব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, ঘাটে মালামাল বহনে কুলিদের মজুরি ১০ কেজি ওজনের মালের জন্য ১০ টাকা, ২০ কেজির জন্য ২০ টাকা ও ৩০ কেজির জন্য ৩০ টাকা, ৪০ কেজির জন্য ৪০ টাকা, ৬০ কেজির জন্য ৫০ টাকা এবং প্রতিটি ফ্রিজের জন্য ৫০ টাকা, মোটরসাইকেলের জন্য ২৫ টাকা, বাইসাইকেল ২০ টাকা, আলমারি ১০০ টাকা, টেবিল ২০ টাকা, টেলিভিশন ২০ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু ঘাটে কোনো ধরনের নিয়ম না মেনে কুলিরা কয়েক গুণ বেশি আদায় করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১ নম্বর গেটের ঠিক সামনেই একপাশে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ব্যবহৃত কোন পণ্য বহনে কুলিরা কত টাকা নেবে তার তালিকা। কিন্তু চোখে পড়ল ভিন্ন কিছু। দুজন যাত্রী তাদের দুটি বাইসাইকেল নিয়ে ঢুকতে চাচ্ছে টার্মিনালে। কিন্তু গেটে দাঁয়িড়ে থাকা কুলিরা দুটি সাইকেলের জন্য ৪০০ টাকা দাবি করে।
প্রথম গেটে অনেক কথা বলেও ঢুকতে না পেরে যাওয়া হয় যথাক্রমে ২ ও ৩ নম্বর গেটে। সেখানে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ৪ নম্বর গেটে গিয়ে পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে ১৫০ টাকা করে দিয়ে টার্মিনালে ঢুকতে পারে ওই দুজন। অথচ প্রতি বাইসাইকেলে নেওয়ার কথা ২০ টাকা করে।
এভাবে অধিকাংশ যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি টোল আদায় করছে কুলিরা। প্রতিবাদ করতে গেলেই অপমান আর গায়ে হাত তুলছে তাদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র। শুধু তা-ই নয়, বাড়তি টাকা নিয়ে গেট পার করে দিয়েই উধাও হয়ে যায় কুলি। যেমনটা বলছিলেন নিমতলি থেকে বরগুনার উদ্দেশে রওনা হওয়া জালাল মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘মুরগির খাবার দেওয়ার পাত্র নিয়ে ঢুকতে যেখানে ৫০ টাকার মতো দিলে হয়ে যাওয়ার কথা সেখানে ২০০ টাকা নিয়েছে। গেটে প্রথমে একজন নেয় ২০ টাকা, তারপর আবার গেটে ১০ টাকা, আর ২০০ টাকা নিয়েছে ইজারাদার। আগেরবার মুরগি ছিলার মেশিন নিয়ে ঢুকেছিলাম। এক হাজার টাকার কম নেয়নি। কম দিতে চাইলে খারাপ ব্যবহার করে। গায়েও হাত তোলে। ’
অভিযোগ আছে মাল লঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছে দিলেও কুলিরা বাড়তি টাকা দাবি করে। এ বিষয়ে অলিখিত ইজারাদার নিউ ভিশনের পরিচালক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শিপু আহমেদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি দেশের বাইরে থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে দায়িত্বশীল সানু নামের একজন বলেন, ‘কোনো যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হয় না। কুলিদের খুশি হয়ে যে যা দেয় তাই নেওয়া হয়। আর কিছু বলতে পারব না। বলার হলে শিপু ভাই বলবেন। ’