ফ্রান্সের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ আর জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের বৈঠকের পর বিশ্লেষকরা বলছেন, নানামুখী সংকটে পীড়িত ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) গতি ফেরানোর নেতৃত্বে অগ্রভাগে থাকবেন এ দুজন। তাঁরা দুজন ইইউবিরোধী লোকরঞ্জনবাদীদের বিরুদ্ধেও ভূমিকা রাখবেন বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ম্যাখোঁ প্রথম বিদেশ সফরের জন্য জার্মানিকে বেছে নেন। গত সোমবার তিনি বার্লিনে যান। নিজ দেশে পরিবর্তনের বার্তা শুনিয়ে নির্বাচনে জয় পেলেও তিনি কিন্তু জার্মানিতে গিয়ে কোনো বড় ধরনের পরিবর্তনের কথা বলেননি।
বিশ্লেষক সংস্থা কার্নেগি ইউরোপের কর্মকর্তা জুডি ডেম্পসি বলেন, ‘ম্যাখোঁ বড় ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী কোনো পরিবর্তনের ওপর জোর দেননি। কারণ তিনি জানেন, চ্যান্সেলর (মার্কেল) সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের আগে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবেন না। ’ জার্মানিতে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে মার্কেল অনায়াসে জয় পাবেন বলে ধারণা করছেন পর্যবেক্ষরা। দেশটির বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনের ফল ও নির্বাচনপূর্ব জরিপ তেমন আভাসই দিচ্ছে।
এদিকে মার্কেলও তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি করেননি ম্যাখোঁর ওপর। জার্মান ফরেইন পলিসি ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা ক্লেয়ার ডেমেসমে বলেন, ‘ম্যাখোঁ নির্বাচিত হওয়ায় তাঁর সঙ্গে বসে আলাপ করতে পারছেন, স্রেফ এইটুকু মনে করেই যে তাঁকে উৎপাহ দেওয়ার ইচ্ছা (মার্কেলের মনে) কাজ করছে, সেটা স্পষ্ট। কারণ নির্বাচনে মারিন ল্য পেনের জয়ের মতো সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি আমরা এড়াতে পেরেছি। ’ প্রসঙ্গত, নির্বাচনী প্রচারকালে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে কথা বলেছিলেন কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিক ল্য পেন। অন্যদিকে ম্যাখোঁ জোটবদ্ধ হয়ে সংস্কারের পক্ষে কথা বলেছেন। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপন্থী ম্যাখোঁর জয়ের পর ফ্রান্সকে সহায়তা করতে প্রয়োজনে ইইউ চুক্তিতে পরিবর্তন আনার কথা বলেছেন জার্মান নেতা মার্কেল। ‘কী করা যায়, সেটা আমরা ভেবে দেখি’—মার্কেলের মুখ থেকে সচরাচর এমন কথা শুনতে অভ্যস্ত আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এবার সরাসরি তাঁর কাছ থেকে একটা সুস্পষ্ট পদক্ষেপের ইঙ্গিত পেয়ে ধারণা করছেন, জঙ্গি হুমকিসহ নানা ধরনের টানাপড়েনের মধ্যে থাকা ইইউকে গতিশীল করতে এবার ম্যাখোঁ-মার্কেল নেতৃজুটি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
না বললেই নয়, ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতি তাদের জিডিপির ৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আগামী বছরও সেটা ৩.২ শতাংশের নিচে আসবে না বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা। অথচ ইইউ নীতিমালা অনুসারে, এ ঘাটতি ৩ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। জোটের আরেক সদস্য গ্রিসকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিয়ে তাদের দেউলিয়াত্ব ঠেকানো হয়েছে। ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির অধিকারী জার্মানির অবস্থান কিন্তু বেশ ভালো। তাদের বাজেটে এবার ০.৩ শতাংশ উদ্বৃত্তের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি থেকে ইইউর উত্তরণে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে জোটের সব সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াধীন ব্রিটেন তাদের এসংক্রান্ত কার্যক্রম শেষ না করা পর্যন্ত সেটা সম্ভব হচ্ছে না। সূত্র : এএফপি।