নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। বেআইনি পন্থায় সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে এ মামলা হচ্ছে। সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে তার কপি গুলশান থানাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে।
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়েরের পর মান্নাকে ফের রিমান্ড চাইবে পুলিশ। কাক্সিক্ষত রিমান্ড মঞ্জুর হলে তাকে টাস্কফোর্স ইন্টারগেশন সেলে (টিএফআই) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ অনুযায়ী ২৪ ফেব্র“য়ারি ভোররাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে আটকের পর ২০ ঘণ্টা নিখোঁজ ছিলেন তিনি। ওইদিন রাতেই র্যাব তাকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। ২৪ ফেব্র“য়ারি গুলশান থানায় দায়ের করা দণ্ডবিধির ১৩১ ধারা বা সেনাবাহিনীকে বিদ্রোহে উস্কানি দেয়ার মামলায় তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। মঙ্গলবার ছিল রিমান্ডের ৬ষ্ঠ দিন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যুগান্তরকে বলেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার যথেষ্ট প্রমাণ থাকায় তার বিরুদ্ধে মামলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কবে নাগাদ মামলা হতে পারে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা পুলিশের বিষয়। তারা আজও করতে পারে, কালও করতে পারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘২৬ ফেব্রুয়ারি গুলশান থানায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (১৬৮৮) করা হয়। তাতে বলা হয়, আসামি নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বিষয়ে টেলিফোনে আলাপ হয়। ইউটিউবে প্রকাশিত ওই কথোপকথনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান অবরোধ, হরতাল, সহিংস কার্যকলাপের মাধ্যমে জানমালের ক্ষতিসাধন ও বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের পতন সম্পর্কে নানা পরামর্শ করা হয়। আলাপে মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারকে অবৈধ ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে উৎখাতের জন্য বিভিন্ন ধবংসাত্মক পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলেন। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল, মারামারি ও হলদখলসহ বর্তমানে যে সহিংস নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চলছে তা চালিয়ে যেতে বলেন। এ অবস্থায় সরকারকে বেআইনি পন্থায় উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ১২০বি এবং ১২১এ ও ১২৪এ ধারায় মামলা রুজুর লক্ষ্যে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর যথাক্রমে ১৯৬এ ও ১৯৬ ধারার অধীন সরকারের অনুমোদন জ্ঞাপন করা হল।’
সূত্র জানায়, দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ১২০বি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, ১২১এ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকি এবং ১২৪এ সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহের কথা বলা হয়েছে।
ডিবি সূত্র জানায়, মামলার তদন্তে মান্নার অতীত রাজনীতির ইতিহাসও খতিয়ে দেখা হয়েছে। এক সময় ছাত্র সংঘের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা মান্না পরে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনে জড়িত হন। কিন্তু পারিবারিকভাবে মান্নার পরিবার আওয়ামী লীগবিরোধী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তার মূল টার্গেট কি ছিল জানতে চাইলে ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলত তার মূল টার্গেট ছিল গাড়িতে জাতীয় পতাকা পাওয়া।’ এর জন্য যা যা করার দরকার মান্না সবই করতে চেয়েছেন।