বিভিন্ন জায়গায় ১৭ প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন

0
344
বিভিন্ন জায়গায় ১৭ প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন
বিভিন্ন জায়গায় ১৭ প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন

ঢাকা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সালমা ইসলামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৭ প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে তারা নির্বাচন বর্জন করেছেন বলে জানা গেছে।

ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মটরগাড়ি প্রতীকের অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। একই সঙ্গে অবিলম্বে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে এ আসনে আবারও নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রোববার দুপুর ১২টায় নবাবগঞ্জের কামারখোলায় নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে সালমা ইসলামের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

নুরুল ইসলাম বলেন, আজ ৩০ ডিসেম্বর, বিজয়ের মাস। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির লোক। আমার প্রার্থী সালমা ইসলাম এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্বতন্ত্র হলেও তিনিও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির লোক।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা-১ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সালমান এফ রহমান। এ আসনে নির্বাচনী প্রচারে আমার প্রার্থী কখনোই সমান সুযোগ পায়নি। নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নিজস্ব বাহিনী দ্বারা আমার প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ কর্মীদের ওপর হামলা এবং তাদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট অব্যাহতভাবে চালিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা নির্বাচনী মাঠে ছিলাম। কিন্তু গত তিন দিন ধরে সেই পরিস্থিতি অসহনীয় ও অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে।

নুরুল ইসলাম বলেন, এ পরিস্থিতিতে আমার মটরগাড়ি প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে আর নির্বাচন চালিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই চলমান এ নির্বাচন থেকে আমি আমার প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিচ্ছি।

এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম, পরিচালক (অর্থ) আবদুল ওয়াদুদ প্রমুখ।

ঢাকা-১৭: এ আসনে ভোট বর্জন করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ। তিনি বারিধারায় নিজ বাসায় দুপুর পৌনে ২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

সাংবাদিকদের কাছে আন্দালিব রহমান পার্থ অভিযোগ করেন, সন্ত্রাসীদের কর্তৃক ঢাকা-১৭ আসনের বিভিন্ন কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে মারধর করে তাদের মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এছাড়াও তার এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ঢাকা-১৭ আসনটি (গুলশান, বনানী, ঢাকা সেনানিবাস ও ভাষানটেকের কিছু অংশ) নিয়ে গঠিত। এ আসনের আন্দালিব রহমান পার্থর প্রতিদ্বন্দ্বী করছেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। এছাড়াও এই আসনে সিংহ মার্কায় স্বতন্ত্র প্রার্থী তৃণমূল বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।

বাগেরহাট-৩: ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়া বাগেরহাট-৩ আসনে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মোহাম্মদ আবদুল ওয়াদুদ ভোট বর্জন করেছেন। এ আসনে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী হাবিবুন নাহার আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

বাগেরহাট-৪: এ আসনের (মোরেলগজ্ঞ-শরণখোলা) ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াত নেতা অধ্যাপক আবদুল আলীম দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভোট বর্জন করেন। তিনি দুপুরে জানান, তার নির্বাচনী এলাকার ১৩৬টি কেন্দ্রের প্রায় সবকটি থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া তার সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর খোলা টেবিলে নৌকার পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। এ অবস্থায় প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রহসনের এই নির্বাচন থেকে বাধ্য হয়ে সরে দাঁড়িয়েছি। আমি এই মুহূর্তে এ নির্বাচন বর্জন করছি।

সাতক্ষীরা-৪: এ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াতে ইসলামের গাজী নজরুল ইসলাম ভোট বর্জন করেছেন। তিনি কারাবন্দি থাকায় তার পক্ষে এ ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী অধ্যাপক আবদুল জলিল। তিনি বলেন, রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভোটে অনিয়ম, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, জালভোট, ভোটারদের হুমকি-ধামকি, ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধাদানসহ নানা কারণে ভোট বর্জন করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬: ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এমএ খালেক ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেন।

ফরিদপুর-২: ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) আসনে বিএনপির প্রার্থী শামা ওবায়েদ ইসলাম নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ওই আসনের ১২৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০০টি কেন্দ্রে শনিবার রাতেই ভোট দিয়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, রোববার সকালে যেসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে, সেসব কেন্দ্রে বিএনপির কোনো পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে নিজেও ভোট দেননি শামা ওবায়েদ ইসলাম। ওই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

খুলনা-১: দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা-১ আসনের বিএনপি প্রার্থী আমির এজাজ খান ভোট বর্জন করেন। খুলনা-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস।

খুলনা-৩: খুলনা-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল ভোট বর্জন করেছেন। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুন্নুজান সুফিয়ান।

খুলনা-৪: খুলনা-৪ আসনের আজীজুল বারী হেলাল ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তারা তিনজনই বিএনপির প্রার্থী। আসনে আবদুস সালাম মুর্শেদী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন

খুলনা-৫: খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। ভোট শুরুর আড়াই ঘণ্টা পর প্রথম ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়া মিয়া গোলাম পরওয়ার। ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।

মিয়া গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করেন, ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেয়া, দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনাগুলো রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করার পরও কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় তিনি ভোট বর্জন করছেন। অবৈধ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচন বৈধ করতে তিনি রাজি নন বলে তিনি জানান।

শেরপুর-২: বিএনপি মনোনীত ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত শেরপুর-২ (নালিতাবাড়ী-নকলা) আসনের প্রার্থী ফাহিম চৌধুরী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শেরপুর জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গেটে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

শেরপুর-৩: শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মাহমুদুল হক রুবেল ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শেরপুর জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তিনি ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেন।

সারা রাত ধরে ব্যালটে সিল মারা, এজেন্টদের বের করে দেয়া, নানা ধরনের কারচুপি, নির্বাচনের কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। এ অভিযোগসহ দলের নেতাকর্মীদের এবং সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় বিএনপির ওই দুই প্রার্থী ভোট বর্জন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

এছাড়া রাজবাড়ী-১, নীলফামারী-২ ও ৩ এবং খুলনা-৬ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছেন।