সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় ঈদ আনন্দের হাওয়া বইলেও তার ছোঁয়া লাগেনি রুপার বাড়িতে। আজ শনিবার ঈদের দিন ভোরে রুপার মা হাসনা হেনা ঘুমের মধ্যে রুপা রুপা বলে কেঁদে ওঠেন। ফজরের আজান দিলে নামাজ পড়ে জায়নামাজে বসেই চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন বোন ফুলেরা, পপি খাতুন, ভাই উজ্জল ও হাফিজুর রহমান।

নামাজ শেষে হাফিজুর ও উজ্জল প্রতিবেশীদের নিয়ে গ্রামের কবরস্থানে গিয়ে বাবা জেলহক প্রামানিক ও রুপার কবর জিয়ারত করেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রুপাদের বাড়িতে কোনও চুলাই জ্বলেনি। টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর পাঁচ নরপশু কর্তৃক নিহত তাড়াশের আসানবাড়ী গ্রামের রুপার বাড়িতে তাই এখন ঈদের আনন্দের ছোঁয়া না লাগলেও এখনও রয়েছে শোকের ছোঁয়া।

প্রতিবেশীরা জানান, সকালে হাফিজুরকে ঈদের নামাজ পড়াতে গ্রামের ঈদের মাঠে নিয়ে যান তারা। গত ঈদুল ফিতরে বোনের দেওয়া পাঞ্জাবি পরে ঈদের মাঠে গিয়ে নিশ্চুপ থেকে নীরবে কেঁদেছেন আদরের ছোট বোন হারানো হতভাগ্য বড় ভাই হাফিজুর। গ্রামের প্রতিবেশীরা রুপাদের বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন। তাদেরকে শোক সইবার জন্য সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানিয়েছেন। প্রতিবেশীরা অনেকেই উজ্জল ও হাফিজুরকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাওয়ানোর পীড়াপিড়িও করেছেন।

মা হাসনা হেনা কেঁদে কেঁদে বলেন, “রুপার বাবা মারা যাওয়ার পর রুপাই ঈদের আনন্দকে পরিবারের সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করতো। অথচ ঈদের আগ মুহূর্তে আমার কলিজার টুকরোকে পাঁচ নরপশু নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আল্লাহ তাদের ছাড়বে না। ” ‘আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই ও আমার জীবদ্দশায় তা দেখে যেতে চাই’ বলে কেঁদে ওঠেন তিনি।

বড় ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, “ঈদের আগে বাড়িতে এসে প্রথমেই আদরের ভাতিজির হুমাইরাকে নতুন জামা পড়িয়ে দিত। ঈদের আগের রাতে ছোট বোনসহ ছোটদের হাত মেহেদিতে রাঙ্গিয়ে দিত। দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও পরিপূর্ণ ঈদের আনন্দ সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নিতো। রুপার জুড়ি ছিল না। ”

ছোট ভাই উজ্জল বলেন, “রুপাকে না দেখে কোনও বারই ঈদের নামাজ পড়তে যাইনি। পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি ও খণ্ডকালীন চাকরি করে রুপা আপা যা রোজগার করতেন সেখান থেকে বাড়ির সব সদস্যদের জন্য ঈদ উপলক্ষে পোশাক কিনে দিতেন। ” তাদের এমন শোকে তাই আসানবাড়ীর গ্রামবাসী সবার মাঝে ছিল না গত ঈদের মত আনন্দ।

এর আগে সকালে ঈদের নামাজে গ্রামের ঈদের মাঠে গ্রামের রুপাসহ সকল মৃত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

উল্লেখ্য, বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্সের ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজে এলএলবি’র ছাত্রী রুপা ময়মনসিংহে একটি কম্পানিতে চাকরি করছিলেন। গত ২৫ আগস্ট তিনি বগুড়ায় যান শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে। পরীক্ষা শেষে তিনি ময়মনসিংহের কর্মস্থলে ফিরছিলেন ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে। সেই বাসে তাঁকে পালাক্রমে ধর্ষণের পর ঘাড় মটকে ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়।

এরপর মৃতদেহ টাঙ্গাইলের মধুপুরে ফেলে দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ১১টায় পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে।