এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। এই পরীক্ষা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; যার মধ্যে রয়েছে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে আসন গ্রহণ, সব শিক্ষা বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা, আজ শুক্রবার থেকে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ, প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলে পরীক্ষা বাতিল, শুধু কেন্দ্রসচিব একটি সাধারণ ফোন (স্মার্টফোন নয়) সঙ্গে রাখতে পারবেন ইত্যাদি।
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এক সভায় এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে শুধু কেন্দ্রে প্রবেশ নয়, সিটে বসতে হবে পরীক্ষার্থীদের। কেউ এ সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে না পারলে তার পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। ফলে সকাল ১০টা থেকে পরীক্ষা শুরুর সময় নির্ধারণ করা হলেও কার্যত শিক্ষার্থীদের সকাল সাড়ে ৯টা মাথায় রেখে বাসা থেকে বের হতে হবে। কিছুদিন ধরেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা বলা হচ্ছিল। এর আগে জেএসসি পরীক্ষায় আধাঘণ্টা আগে পরীক্ষার হলে প্রবেশের কথা বলা হলেও তা শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যবাধকতা ছিল না।
রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষার্থী আরিফ হোসেনের বাবা আকবর হোসেন বলেন, ‘পরীক্ষা ১০টায় শুরু হলে কেন সাড়ে ৯টায় প্রবেশ করতে হবে? তাহলে সাড়ে ৯টায় পরীক্ষা শুরু করলেই হয়। মন্ত্রণালয় প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে না পেরে শিক্ষার্থীদের বিপাকে ফেলছে।’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শাখার একজন শিক্ষার্থীর বাবা আবদুল আলীম বলেন, ‘আমার বাসা খিলগাঁও। পরীক্ষা দিতে আমার সন্তানকে প্রতিদিন মগবাজারে আসতে হবে। এমনিতেই বাসা থেকে স্কুলে আসতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। এখন যদি সাড়ে ৯টায় কেন্দে প্রবেশ করতে হয় তাহলে কমপক্ষে সাড়ে ৭টায় বাসা থেকে বের হতে হবে। তাহলে সকালের প্রস্তুতিটাই তো নিতে পারবে না।’
তবে গতকালের সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগেই পরীক্ষার্থীদের নিজ আসনে বসতে হবে। এরপর আর কোনোভাবেই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
আজ শুক্রবার থেকে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ করতে সভায় উপস্থিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যদিও এসএসসি পরীক্ষা শুরুর তিন দিন আগে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কিন্তু বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাত দিন আগে থেকেই নতুন করে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম পরিচালক নাজমুল আলম বলেন, পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ট্রেজারি থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় অনেক বড় গাফিলতি হয়। সেখান থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে ফেসবুকে প্রশ্নপত্র বিক্রির বিজ্ঞাপন পাওয়া গেছে। আমরা তা নিয়ে কাজ করছি।’
এ ছাড়া প্রশ্নপত্র বিতরণের সময় অনেক কেন্দ্রসচিব উপস্থিত না হয়ে তাঁদের প্রতিনিধিদের পাঠান। এটি বন্ধ করে কেন্দ্রসচিবের উপস্থিতি নিশ্চিত, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে নিয়োজিত রাখা, ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে অধিক প্রচারণাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা ও বিভাগের কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহানারা বানু, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।