আমাদের Ausbildung সিরিজের আগের তিনটি পর্ব যারা পড়েছেন, তারা এখন জানেন যে আপনার যোগ্যতা আছে কিনা এবং টাকার হিসাব কীভাবে মেলাতে হবে।
ধরে নিলাম আপনার B2 সার্টিফিকেট আছে, বয়স ঠিক আছে এবং টাকার হিসাবও মিলে গেছে। এখন আপনি উৎসাহ নিয়ে আবেদন করা শুরু করলেন। ১০টা, ২০টা, ৫০টা কোম্পানিতে ইমেইল করলেন।
কিন্তু ফলাফল? শূন্য।
বেশিরভাগ জায়গা থেকে কোনো রিপ্লাই আসছে না, আর যে দু-একটা আসছে, সেগুলোও রিজেকশন লেটার (Absage)। আপনি হতাশ হয়ে ভাবছেন, “আমার তো সব যোগ্যতা আছে, তাও কেন ডাকছে না?”
German Bangla-র আজকের পর্বে আমরা এই করুণ বাস্তবতার মুখোমুখি হব। সমস্যা আপনার যোগ্যতায় নয়, সমস্যা আপনার আবেদনের পদ্ধতিতে (Application Strategy)।
১. কেন আপনার সিভি রিজেক্ট হচ্ছে? (দ্য রিয়ালিটি চেক)
সোজাসাপ্টা কথা—আমরা বাংলাদেশে যেভাবে সিভি বানাই (যেমন: Bdjobs স্টাইল), সেটি জার্মানির স্ট্যান্ডার্ডের সাথে মেলে না।
জার্মান এইচআর (HR) ম্যানেজাররা দিনে শত শত সিভি দেখেন। তাদের হাতে সময় নেই আপনার ৫ পৃষ্ঠার সিভি পড়ার। তারা প্রথম ১০ সেকেন্ডে সিদ্ধান্ত নেন সিভিটি রাখবেন নাকি ফেলে দেবেন।
বাংলাদেশি আবেদনকারীদের সাধারণ ভুলগুলো:
- ভুল ফরম্যাট: জার্মানিতে সিভি হতে হয় টেবুলার (Tabular) এবং এক থেকে দুই পৃষ্ঠার মধ্যে।
- অপ্রাসঙ্গিক তথ্য: বাবার নাম, মায়ের নাম, ধর্ম, গ্রামের বাড়ি—এগুলো জার্মান সিভিতে লাগে না।
- ছবি না থাকা: জার্মানিতে সিভির ডান কোণায় একটি প্রফেশনাল ছবি থাকা বাধ্যতামূলক (যদিও এটি নিয়ে বিতর্ক আছে, কিন্তু Ausbildung-এর জন্য এটি জরুরি)।
- কপি-পেস্ট কভার লেটার: “Respected Sir/Madam” দিয়ে শুরু করা জেনেরিক চিঠি তারা ঘৃণা করে।
২. জার্মান স্ট্যান্ডার্ড আবেদনপত্র (Bewerbungsunterlagen)
জার্মানিতে আবেদন করতে হলে আপনাকে একটি কমপ্লিট পিডিএফ (PDF) ফাইল পাঠাতে হবে, যাতে নিচের ডকুমেন্টগুলো ক্রমানুসারে থাকবে:
ক. কভার লেটার (Anschreiben) – ১ পৃষ্ঠা
এটি আপনার সিভির চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এখানে আপনাকে লিখতে হবে—কেন আপনি “ঐ নির্দিষ্ট কোম্পানিটিকেই” বেছে নিয়েছেন এবং কেন আপনি এই কাজের জন্য যোগ্য। এটি অবশ্যই জার্মান ভাষায় এবং কোম্পানির এইচআর ম্যানেজারের নাম সম্বোধন করে (যেমন: Sehr geehrte Frau Müller) লিখতে হবে।
খ. সিভি (Lebenslauf) – ১-২ পৃষ্ঠা
এটি হবে আপনার জীবনের সারাংশ।
- Persönliche Daten: নাম, ঠিকানা, ইমেইল, ফোন নম্বর এবং প্রফেশনাল ছবি।
- Schulbildung: আপনার স্কুল/কলেজের শিক্ষা (HSC/Honours)।
- Berufserfahrung: যদি কোনো কাজের অভিজ্ঞতা বা ইন্টার্নশিপ থাকে।
- Kenntnisse: ভাষা (German B2, English) এবং আইটি স্কিল (MS Office, etc.)।
গ. সার্টিফিকেট (Zeugnisse)
আপনার সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ এবং ল্যাঙ্গুয়েজ সার্টিফিকেট (B2) এর স্ক্যান কপি। মনে রাখবেন, এগুলো অবশ্যই নোটারি বা এটেস্টেড করা এবং প্রয়োজনে জার্মান ভাষায় অনূদিত হতে হবে।
৩. চাকরির সোনার খনি: কোথায় আবেদন করবেন?
সিভি রেডি হওয়ার পর প্রশ্ন হলো, আবেদন করব কোথায়? নিচে জার্মানিতে Ausbildung খোঁজার সেরা কিছু অথেনটিক পোর্টালের নাম দেওয়া হলো:
- Azubiyo.de: এটি Ausbildung খোঁজার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ইউজার-ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট। এখানে আপনি আপনার পছন্দের শহর এবং পেশা অনুযায়ী ফিল্টার করতে পারবেন।
- Arbeitsagentur.de: এটি জার্মান সরকারের অফিসিয়াল এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির সাইট। এখানে হাজার হাজার বিশ্বস্ত অফার থাকে।
- Ausbildung.de: আরেকটি জনপ্রিয় পোর্টাল যেখানে প্রচুর ভ্যাকেন্সি থাকে।
- কোম্পানির ক্যারিয়ার পেজ: আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো বড় কোম্পানি (যেমন: DB, Siemens, BMW) তে কাজ করতে চান, তবে সরাসরি তাদের ওয়েবসাইটের ‘Karriere’ বা ‘Jobs’ সেকশনে চোখ রাখুন।
উপসংহার
জার্মানিতে Ausbildung পাওয়া একটি ধৈর্যের পরীক্ষা। ১০০টি আবেদন করে ৫টি রিপ্লাই পাওয়া এবং সেখান থেকে ১টি ইন্টারভিউ কল পাওয়া—এটাই স্বাভাবিক পরিসংখ্যান। কিন্তু আপনার ডকুমেন্ট যদি পারফেক্ট হয়, তবে সেই ১টি ইন্টারভিউই আপনার জীবন বদলে দিতে পারে।
পরবর্তী পর্বে যা থাকছে (The Final Boss)
ধরুন, আপনার সিভি তাদের পছন্দ হয়েছে এবং তারা আপনাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ইমেইল করেছে। অভিনন্দন! কিন্তু আসল যুদ্ধ তো মাত্র শুরু হলো।
- জার্মান এইচআর (HR) ইন্টারভিউতে কী কী প্রশ্ন করে?
- কন্ট্রাক্ট পাওয়ার পর এম্বাসি ইন্টারভিউ (Visa Interview) কীভাবে ফেস করবেন?
এই সব চ্যালেঞ্জিং ধাপ পার করার কৌশল নিয়ে আসছি আমাদের সিরিজের ৫ম ও শেষ পর্বে: “ইন্টারভিউ হ্যাকস: কন্ট্রাক্ট থেকে ভিসা পর্যন্ত।”
চোখ রাখুন German Bangla-র ওয়েবসাইটে।


