আমাদের আগের পর্বে আমরা জেনেছি Ausbildung বা আউসবিল্ডুং কী এবং কেন এটি বর্তমানে জার্মানি যাওয়ার সেরা উপায়। টিউশন ফি ছাড়া পড়াশোনা এবং মাসে ১ লক্ষ টাকা আয়ের কথা শুনে অনেকেই আগ্রহী হয়েছেন।
কিন্তু বাস্তবতা হলো—সবাই এই সুযোগ পাবে না।
জার্মান কনস্যুলেট এবং কোম্পানিগুলোর কিছু নির্দিষ্ট রিকোয়ারমেন্টস বা যোগ্যতা আছে। আপনার যদি এই যোগ্যতাগুলো না থাকে, তবে হাজার চেষ্টা করেও ভিসা পাওয়া কঠিন হবে। German Bangla-র আজকের এই পর্বে আমরা আলোচনা করব সেই ৩টি প্রধান শর্ত নিয়ে যা পূরণ করা বাধ্যতামূলক।

১. ভাষার দক্ষতা: B1 নাকি B2? (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ)
সোজাসাপ্টা কথা—জার্মান ভাষা ছাড়া Ausbildung অসম্ভব। অনেকে প্রশ্ন করেন, “ভাইয়া, ইংলিশে কি আউসবিল্ডুং করা যায়?” উত্তর হলো: না।
যেহেতু আপনাকে জার্মান কলিগদের সাথে কাজ করতে হবে এবং ভোকেশনাল স্কুলে জার্মান ভাষায় পড়াশোনা করতে হবে, তাই ভাষার দক্ষতা এখানে প্রধান চাবিকাঠি।
- কাগজে-কলমে নিয়ম: আইনত B1 লেভেল পাস করলেই আপনি আবেদনের যোগ্য।
- বাস্তবতা: নার্সিং (Nursing/Pflege) এর জন্য বর্তমানে কোম্পানি এবং এম্বাসি B2 সার্টিফিকেট চাইছে। অন্যান্য সেক্টরে (যেমন হোটেল বা রেস্টুরেন্ট) B1 দিয়ে আবেদন করা সম্ভব, তবে B2 থাকলে আপনার অফার লেটার পাওয়ার সম্ভাবনা ৯০% বেড়ে যায়।
২. শিক্ষাগত যোগ্যতা: HSC নাকি অনার্স?
Ausbildung এর জন্য আপনার খুব উচ্চশিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, তবে বেসিক স্কুলিং থাকতে হবে।
- ন্যূনতম যোগ্যতা: বাংলাদেশে যা HSC (Higher Secondary Certificate) বা সমমান। জার্মানিতে এটিকে বলা হয় ‘Abitur’ বা ‘Realschulabschluss’-এর সমতুল্য।
- ডিপ্লোমা: কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে যারা ৪ বছরের ডিপ্লোমা করেছেন, তারা সরাসরি আবেদনের যোগ্য।
- GPA বা জিপিএ: সাধারণত জিপিএ খুব বড় ফ্যাক্টর না, তবে পাস মার্কস থাকতে হবে। তবে নার্সিং-এর জন্য বায়োলজি বা সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যায়।
অনেকের প্রশ্ন: “আমার অনার্স/মাস্টার্স শেষ, আমি কি পারব?”
উত্তর: হ্যাঁ, পারবেন। বরং আপনার ম্যাচিউরিটি বেশি বলে কোম্পানি আপনাকে পছন্দ করতে পারে। তবে আপনাকে ইন্টারভিউতে বোঝাতে হবে কেন আপনি মাস্টাসর্ শেষ করে আবার ভোকেশনাল ট্রেনিং করতে চাইছেন।
৩. বয়স এবং স্টাডি গ্যাপ (Age Limit & Gap)
এটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভুল ধারণা বা গুজব শোনা যায়। আসুন সত্যটা জানি।
বয়সসীমা (Age Limit)
জার্মান আইনে Ausbildung-এর কোনো নির্দিষ্ট বয়সের ঊর্ধ্বসীমা নেই। আপনি ৩৫ বা ৪০ বছর বয়সেও এটি করতে পারেন। কিন্তু, ভিসা অফিসার এবং কোম্পানি সাধারণত ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের বেশি অগ্রাধিকার দেয়।
- ১৮-২৫ বছর: আইডিয়াল সময়। ভিসা পাওয়া সহজ।
- ২৬-৩০ বছর: সম্ভব, তবে স্ট্রং মোটিভেশন লেটার লাগবে।
- ৩০+ বছর: একটু কঠিন, তবে নার্সিং সেক্টরে এখনো সুযোগ আছে।
স্টাডি গ্যাপ (Study Gap)
আপনার পড়াশোনায় যদি ৩-৪ বছরের গ্যাপ থাকে, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু এই গ্যাপের সময়ে আপনি কী করেছেন তার প্রমাণ দেখাতে হবে।
যেমন: “আমি ৩ বছর একটি ক্লিনিকে জব করেছি” অথবা “আমি কম্পিউটার ট্রেনিং নিয়েছি”। গ্যাপের সময়ের কাজের অভিজ্ঞতার সনদ (Experience Certificate) দেখালে গ্যাপ কোনো সমস্যাই না।
চেকলিস্ট: আপনি কি প্রস্তুত?
আবেদন শুরু করার আগে নিচের ৩টি প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ কিনা মিলিয়ে নিন:
- আমার হাতে কি HSC বা সমমানের পাসের সার্টিফিকেট আছে?
- আমার কি জার্মান ভাষা শেখার (B1/B2) ধৈর্য আছে?
- আমার বয়স কি ১৮ থেকে ৩০ এর মধ্যে? (৩০+ হলে বিশেষ প্রস্তুতি লাগবে)
যদি সবগুলোর উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তবে অভিনন্দন! আপনি জার্মানি যাওয়ার প্রথম ধাপ পার করেছেন।
পরবর্তী পর্বে যা থাকছে
যোগ্যতা তো মিলল, কিন্তু আসল চিন্তা তো টাকা নিয়ে!
- জার্মানিতে গিয়ে থাকা-খাওয়ার খরচ কত?
- বেতনের টাকায় কি আসলেই চলা যায়?
- ব্লকড অ্যাকাউন্টের হ্যাক (Hack) কী? কীভাবে ১২ লক্ষ টাকা সেভ করবেন?
এই সব গোপন ক্যালকুলেশন নিয়ে আসছি আমাদের সিরিজের ৩য় পর্বে: “টাকার হিসাব: বেতন vs খরচ এবং ব্লকড অ্যাকাউন্ট হ্যাক।”
চোখ রাখুন German Bangla-র ওয়েবসাইটে।




