জার্মানি যাওয়ার কথা ভাবলেই আমাদের চোখের সামনে ভাসে—বিশাল অঙ্কের ব্লকড অ্যাকাউন্ট (Blocked Account), ইউনিভার্সিটির সেমিস্টার ফি এবং ইউরোতে জীবনযাত্রার উচ্চ খরচ। মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীর স্বপ্ন এই টাকার অভাবেই অনেক সময় থমকে যায়।
কিন্তু আমি যদি বলি, জার্মানি যাওয়ার এমন একটি বৈধ এবং জনপ্রিয় রাস্তা আছে যেখানে:
- আপনাকে কোনো সেমিস্টার ফি বা টিউশন ফি দিতে হবে না।
- পড়াশোনা চলাকালীন কোম্পানি উল্টো আপনাকে প্রতি মাসে বেতন (Stipend) দেবে।
- পড়াশোনা শেষে চাকরির নিশ্চয়তা প্রায় ৯৫%।
বিশ্বাস হচ্ছে না? এই সিস্টেমটির নাম Ausbildung (আউসবিল্ডুং) বা ডুয়েল ভোকেশনাল ট্রেনিং। এটি কোনো সাধারণ স্টুডেন্ট ভিসা নয়, আবার সরাসরি ওয়ার্ক পারমিটও নয়। এটি দুইয়ের একটি চমৎকার সংমিশ্রণ।
German Bangla-র আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো Ausbildung আসলে কী এবং কেন বর্তমান সময়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি গেম-চেঞ্জার।
Ausbildung আসলে কী?
সহজ বাংলায়, এটি হলো “হাতে-কলমে কাজ শেখার” একটি জার্মান শিক্ষা ব্যবস্থা। জার্মানির অর্থনীতির মেরুদণ্ড হলো এই সিস্টেম। এখানে আপনি:
- সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন একটি কোম্পানিতে কাজ করবেন (Practical Work)।
- সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন ভোকেশনাল স্কুলে (Berufsschule) থিওরি ক্লাস করবেন।
সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আপনি যেই কোম্পানিতে কাজ শিখবেন, সেই কোম্পানি আপনাকে মাসের শুরুতেই বেতন দেবে কারণ আপনি তাদের একজন কর্মী হিসেবে গণ্য হবেন।
কেন Ausbildung এখন সবচেয়ে জনপ্রিয়? (অথেনটিক ডেটা)
জার্মানির ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসের (Destatis) তথ্যমতে, বর্তমানে জার্মানিতে লাখ লাখ স্কিলড ওয়ার্কারের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে নার্সিং, আইটি, এবং হসপিটালিটি সেক্টরে। এই অভাব পূরণ করতেই তারা নন-ইউরোপীয় (Non-EU) দেশগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের এই সুযোগ দিচ্ছে।
আসুন কিছু বাস্তব পরিসংখ্যান দেখি যা আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে:
১. মাসিক বেতন (Attractive Salary)
একজন আউসবিল্ডুং ছাত্র হিসেবে আপনি প্রথম বছর থেকেই বেতন পাবেন। সেক্টর ভেদে এই বেতন ভিন্ন হতে পারে (Brutto/Gross):
- নার্সিং (Nursing/Pflege): গড়ে ১,১০০ থেকে ১,৩০০ ইউরো (প্রায় ১,৪০,০০০ – ১,৬৫,০০০ টাকা)।
- আইটি (IT Specialist): ১,০০০ থেকে ১,২০০ ইউরো।
- হোটেল ও রেস্টুরেন্ট: ৮৫০ থেকে ১,০০০ ইউরো।
২. পড়াশোনার খরচ শূন্য
জার্মানিতে আউসবিল্ডুং সম্পূর্ণ ফ্রি। পাবলিক সিস্টেমে আপনাকে কোনো টিউশন ফি দিতে হবে না। উল্টো অনেক কোম্পানি তাদের ছাত্রদের যাতায়াত খরচ (Job Ticket) এবং দুপুরের খাবারের ভাতার ব্যবস্থা করে থাকে।
৩. ব্লকড অ্যাকাউন্ট (Blocked Account) নিয়ে স্বস্তি
সাধারণ স্টুডেন্ট ভিসায় যেখানে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা ব্লকড অ্যাকাউন্টে দেখাতে হয়, সেখানে আউসবিল্ডুং-এ নিয়মটি একটু ভিন্ন। আপনার মাসিক বেতন (Net Salary) যদি আপনার জীবনযাত্রার খরচের (বর্তমানে প্রায় ৯৩৪ ইউরো) সমান বা বেশি হয়, তবে অনেক ক্ষেত্রে ব্লকড অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয় না বা খুব সামান্য পরিমাণ দেখাতে হয়। এটি মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় স্বস্তি।
৪. নিশ্চিত ক্যারিয়ার
পরিসংখ্যান বলছে, যারা সফলভাবে আউসবিল্ডুং শেষ করেন, তাদের মধ্যে প্রায় ৯৫% শিক্ষার্থী তাৎক্ষণিকভাবে সেই কোম্পানিতেই বা অন্য কোথাও ফুল-টাইম চাকরিতে জয়েন করেন। পাস করার পর একজন ফ্রেশারের বেতন সাধারণত ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ ইউরো থেকে শুরু হয়।
বাংলাদেশিদের জন্য জনপ্রিয় কিছু Ausbildung সেক্টর
যদিও জার্মানিতে ৩৫০+ পেশায় আউসবিল্ডুং করা যায়, বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা এবং ডিমান্ড সবচেয়ে বেশি নিচের সেক্টরগুলোতে:
- Pflegefachmann/frau (Nursing): সবচেয়ে বেশি ডিমান্ড এবং ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ।
- Fachinformatiker (IT Specialist): যাদের কম্পিউটার সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড বা কোডিং জ্ঞান আছে।
- Hotelfachmann/frau (Hotel Specialist): ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে।
- Restaurantfachmann/frau (Gastronomy): শেফ বা রেস্টুরেন্ট ম্যানেজমেন্ট।
পরবর্তী পর্বে যা থাকছে
Ausbildung মানেই হলো নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ক্যারিয়ার গড়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো—সবাই কি এই সুযোগ পাবে?
না, সবাই পাবে না। এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা লাগে।
- আপনার বয়স কত হতে হবে? (Age Limit)
- শিক্ষাগত যোগ্যতা (HSC GPA) কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
- ভাষার দক্ষতা (Language) কতটা থাকতে হবে—B1 নাকি B2?
এই সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আসছি আমাদের সিরিজের ২য় পর্বে: “আপনার কি যোগ্যতা আছে? Ausbildung-এর ৩টি কঠিন শর্ত।”
চোখ রাখুন German Bangla-র ওয়েবসাইটে।

