চীন এক সন্তানের নীতি থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে
চীন এক সন্তানের নীতি থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে

চীন এক সন্তানের নীতি থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। জাপানও জনসংখ্যা কমাতে গিয়ে উল্টো বিপদ ডেকে এনেছিল। আমেরিকা কিংবা ইউরোপের অনেক দেশই জনসংখ্যার নিম্নগামিতা রোধে পথ খুঁজছে নানা উপায়ে—যেসব দেশে জায়গা আর অর্থের কোনো কমতি নেই। বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করাও খুব কঠিন নয়। ফলে ওই সব দেশ বিপদে পড়লেই নিজেদের সক্ষমতায়ই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে মজবুত সামাজিক নিরাপত্তা বলয় কার্যকরের মাধ্যমে। কিন্তু বাংলাদেশের অদূর ভবিষ্যতে মাথাভারী জনসংখ্যার বিপদ থেকে সুরক্ষার বিষয়টি মোটেই সহজ হবে না। কারণ না থাকবে নিজস্ব কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ঘাটতি পূরণে বাইরে থেকে জনবল আমদানির ক্ষমতা, না থাকবে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর চাপ সামাল দেওয়ার উপায়। বর্তমানে দাঁড়িয়ে নিকট ভবিষ্যতের সংকট নিয়ে এমনই উদ্বেগ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে দেশে একই সঙ্গে এখনকার তরুণ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ জোরালো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়তে হবে। কর্মক্ষম জাতীয় মাথাপিছু আয় দ্রুত বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে, সর্বোপরি নারীসমাজকে কার্যকর শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের দেশ দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বলেই সম্ভাবনা থাকতেও পিছিয়ে পড়তে হয়। যেসব খাতে দূরদর্শী চিন্তা বা পরিকল্পনার প্রতিফলন ঘটে সেসব খাতে দেশ ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে; সমস্যা আগাম মোকাবেলা করা যাচ্ছে। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কথা বলতে হবে, কাজ করতে হবে জনসংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখা নিয়েও। এ ক্ষেত্রে আর চুপ করে বসে থাকার সুযোগ নেই। এখন থেকেই শুরু করে দিতে হবে প্রস্তুতি। পরিকল্পনা সাজাতে হবে সুনিপুণভাবে। এখন থেকেই ৩০ বছর পর দেশে কী পরিস্থিতি আসবে তা বিবেচনায় রাখতে হবে। একদিকে যেমন বয়স্কবান্ধব কার্যক্রম হাতে নিতে হবে তেমনি তখনকার তুলনামূলক হ্রাসকৃত কর্মক্ষম জনশক্তিকে কিভাবে ব্যবহার করা হবে দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কাঠামো ঠিক রাখতে, তা ভাবতে হবে এখনই। ’

জনসংখ্যাবিদ অধ্যাপক এ কে এম নুর-উন-নবী কালের কণ্ঠকে বলেন, জনসংখ্যার তত্ত্ব অনুসারেই নেগেটিভ গ্রোথের ঝুঁকি থাকবে। উন্নত বা উন্নয়নশীল সব দেশেই ওই ঝুঁকি মোকাবেলায় আগাম পরিকল্পনা রাখতে হয়। এ জন্য অনেক দেশেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকে পাশ কাটিয়ে বরং জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যে ব্যবস্থাপনার ভেতরেই নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য রক্ষার কাজ একসঙ্গে চলতে থাকে। কিন্তু জনসংখ্যার বিস্ফোরণ কমে গেছে বলে কিংবা নেগেটিভ গ্রোথের আশঙ্কায় হাত গুটিয়ে বসে থাকলে কিন্তু আবার হিতে বিপরীত হবে।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, আধুনিক পরিবার ছোট রাখতে হবে। ছোট পরিবার পরিচালনা করা সহজ। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও শিক্ষার কারণেই আজকাল মানুষ ছোট পরিবার চায়। জনসংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেলে দেশ অর্থনৈতিক হুমকিতে পড়ে।