পদ্মা সেতু হলে খুলনাঞ্চলে উন্নয়ন বিপ্লব ঘটবে

0
401

পদ্মা সেতু নির্মাণ খুলনাঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি। এতকাল এ অঞ্চলের আমজনতার লক্ষ্য ছিল উন্নয়নের দিকে। কিন্তু বিরোধী দল দমনের কারণে উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা। সরকারের উন্নয়নের ভাবমূর্তি ক্রমেই ক্ষুণœ হচ্ছে বিরোধী দল নির্যাতনের কারণে। গত মেয়াদে আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে অনেকখানি হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রথম ৫ বছরের শাসনামলে এ অঞ্চলের ৩ কোটি মানুষের কাছে দেয়া কথা রাখতে পারেনি সরকার। তাই পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে বর্তমান সরকার শতভাগ রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ঘরে তুলতে চায়। এই সেতু নির্মাণ প্রশ্নে পদ্মার পশ্চিম পাড়ের আওয়ামী রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আগামী নির্বাচনে-এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই অর্থে বর্তমান সরকার তার প্রথম মেয়াদে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় মেয়াদকালেই এই সেতু নির্মাণ তাদের জন্য একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। সরকার আশা করছে তাদের দ্বিতীয় মেয়াদে এটি করা সম্ভব। সে লক্ষ্যেই জোরেসোরে কাজ চলছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে খুলনাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিপ্লব সাধিত হবে। কিন্তু পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতির সাথে জ্যামিতিক হারে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির আশা করা হলেও বিরোধী দল দমন নিপীড়নের কারণে গাণিতিক হারে জনপ্রিয়তায় ধস নামার আশংকা করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল। এ অঞ্চলে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও ভাবমূর্তি রক্ষায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পদ্মা সেতুর বিষয়ে ব্যাপক তোড়জোড় করলেও টানা অবরোধ ও হরতালে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের একের পর এক মামলা ও হয়রানির দরুন  শাসকদলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির বদলে ভাটা পড়ছে বলে মাঠ পর্যায়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মত প্রকাশ করেছেন।
সূত্রমতে, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের কারণে কেটে যাবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মংলার সকল দৈন্য দশা। সে কারণে পদ্মা সেতু পরবর্তী পরিবর্তিত দক্ষিণাঞ্চল সাজাতে বিশ্ব ব্যাংক আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তারা সম্ভাব্য প্রকল্প নিয়েও গবেষণা শুরু করেছে। দৈর্ঘ্যের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এবং নদীর প্রশস্ততা এবং পানি প্রবাহের তীব্রতার বিচারে বিশ্বের তৃতীয় এই সেতুই হবে ২০১৫ পরবর্তী পরিবর্তিত খুলনার উন্নয়নের মাইলফলক। এই মাইলফলকের দিক-নির্দেশনাই খুলনাকে অসম বঞ্চনার দীর্ঘকালের ইতিহাস ঘোচাতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের পর খুলনার চেহারা পাল্টে যাবে। পদ্মার প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে রচিত হবে উন্নয়নের সেতুবন্ধন। খুলনা এবং বরিশাল বিভাগের ২১ জেলা যুক্ত হবে সরাসরি সড়ক নেটওয়ার্কে। ঢাকার সাথে খুলনার যাত্রাকালীন সময় বাঁচবে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। অন্যান্য জেলার সাথেও সময়ের ব্যবধান কমে আসবে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। মংলাবন্দর চলে আসবে দেশের উন্নয়নের মূলস্রোতে। চট্টগ্রাম বন্দর এবং মংলা বন্দর গ্রথিত হবে একই সূতায়। গ্যাস বিদ্যুৎ রেল এই তিনে মিলে খুলনা হয়ে উঠবে প্রকৃত পক্ষেই দক্ষিণাঞ্চলের রাজধানী। এমনি একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নেই পদ্মা সেতু মুখ্যত খুলনার চাবি হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। এমনি বাস্তবতায় আগামীর খুলনার সম্ভাবনাকে কিভাবে কাজে লাগানো যাবে সেই অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে না পারলে স্বপ্নের পদ্মা সেতুও খুলনার ভাগ্য খুলবে না। সূত্র বলছে, দাতারাও সেতুর অর্থ যোগানে এখন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং উৎসাহী। পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদি ভাবনায় জাইকা তাদের আপত্তি তুলে নেয়। বিশ্ব ব্যাংকও প্রতিশ্রুত অর্থের নিশ্চয়তায় প্রেক্ষাপটে এখন আর সেতুর অর্থের সংস্থানের সমস্যা নেই বললেই চলে বলে সূত্র জানায়। এমনি অবস্থায় সরকারকেই এখন ভাবতে হবে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সাথে সাথে আর কি কি করতে হবে। এই প্রসঙ্গে সূত্র বলছে, পদ্মা সেতুর শতভাগ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এখন থেকেই ভাবতে হবে। যেমন পদ্মা সেতুর সাথে মংলা পোর্টের রেলসংযুক্তি। মংলা পোর্ট থেকে প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুর শতভাগ সদ্ব্যবহার নির্ভর করছে। সূত্রমতে, আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি স্বপ্নবিলাসী মনে হলেও ভবিষ্যতের জন্য এটিই বাস্তব। কারণ ১৬ হাজার কোটি টাকায় বাস্তবায়নের মাধ্যমেই খুলনাঞ্চল হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের সিঙ্গাপুর বা মংলা পোর্ট হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের পেনাং এই অভিমত উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের। দক্ষিণাঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচন প্রধান ভূমিকা রক্ষাকারী হিসেবে পদ্মা সেতুকে বিবেচনার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দূরদর্শী পদক্ষেপই পারে খুলনাকে বঞ্চনার অভিশাপ থেকে ম্ক্তু করতে। এজন্য প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুকে আবর্তিত করেই ভবিষ্যৎ দক্ষিণাঞ্চলকে সাজাতে হবে।